বিদেশে এখন

রাইসির মৃত্যুতে ইরানে ভয়ঙ্কর ক্ষমতার লড়াইয়ের শঙ্কা

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসির আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় হতবাক পুরো বিশ্ব। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন রাইসি। সমবেদনা আর উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদি। যদিও এই ঘটনায় মার্কিন এক সিনেটরের মন্তব্য, বিশ্ব এখন অনেক বেশি নিরাপদ হয়েছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরানে ভয়ঙ্কর ক্ষমতার লড়াই শুরু হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

ইসলামিক রিপাবলিক রাজনৈতিক অবকাঠামোতে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনির পর রাইসি ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। হঠাৎ তার মৃত্যুতে হতবাক মধ্যপ্রাচ্য। এই ঘটনায় শোক জানিয়ে একে মর্মান্তিক উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যার যার মতো সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে সৌদি আরব, ইরাক, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ। সমবেদনা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, 'রাশিয়ার অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন রাইসি।'

এই দুর্ঘটনায় ইরানের প্রতি সম্পূর্ণরূপে সৌহার্দ্যতা প্রকাশ করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ জানায়, রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সম্পর্কে কোন পরিবর্তন আসবে না। আরেক বিবৃতিতে গাজায় হত্যাযজ্ঞে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়তে সমর্থনের জন্য ইব্রাহিম রাইসিকে ধন্যবাদ জানায় হামাস। ইরানের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা।

যদিও মার্কিন রিপাবলিকান নেতা রিক স্কট বলেছেন, যদি রাইসি সত্যি মারা গিয়ে থাকে, ইরানের মানুষ হত্যাকারী স্বৈরশাসক থেকে দেশ রক্ষার সুযোগ পেয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আবহাওয়ার কারণে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার। এভিয়েশন বিশ্লেষকরা বলছেন, সেসময় আকাশে অনেক বেশি কুয়াশা ছিল।

ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আয়াতুল্লাহ আল খোমেনির মৃত্যুর পর যেভাবে ইরানে ভয়ঙ্কর ক্ষমতার লড়াই শুরু হতো, এখন ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর সেই পরিস্থিতিই হবে। তাদের দাবি, অন্যান্য ইসলামিক রিপাবলিকদের তুলনায় রাইসির সহিংসতার পরিমাণ বেশি। দেশে চরমভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির সম্ভাবনাও আছে।

ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরাশ আজিজি বলেন,  'অনেকে খুশি হবেন, উদযাপন করবেন, কিন্তু আমি মনে করি ঘটনাটা বিপজ্জনক। রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে। রাস্তায় বিক্ষোভ হতে পারে। এই ধরনের সংকটের সময় অনেক কিছুই হয়। আয়তুল্লাহ আল খোমেনি মরে গেলে কি হবে? কে হবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা? রাইসির মৃত্যুতে পুরো ইরানে ভয়ঙ্কর ক্ষমতার লড়াই শুরু হবে।'

সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আর খোমেনির সম্মতি নিয়ে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে হস্তান্তর করা হবে প্রেসিডেন্টের সব দায়িত্ব। রাইসির মৃত্যুর ৫০ দিনের মধ্যে ইরানকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর