পিরোজপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভারানী খাল। কৃষকদের সুবিধায় বিভিন্ন দিক বিবেচনায় ২০২০ সালে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে এই খাল খনন করে সরকার। তবে, উদ্দেশ্য কৃষকদের জন্য থাকলেও খাল খননের পর বদলে যায় পুরো দৃশ্যপট।
খননের কয়েক মাসের মধ্যেই খালের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পারাপারে নির্মাণ করা হয় ৭০ থেকে ৮০টি কাঠের পুল, বাঁশের সাকো ও ইট-সিমেন্টের পাকা ব্রিজ। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানি বয়ে চলার পথ, দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এ ছাড়াও খালের জায়গা দখল করে কোথাও কোথাও বসানো হয়েছে দোকানপাট। এনিয়ে জানতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে একে অপরকে দুষছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের একজন বলেন, 'এই খালে নৌকা চলাচল করে না বললেই চলে। কেউ ব্যবহার করে না।'
এদিকে, অবৈধভাবে খাল দখলের কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা বলছেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এখানে চলছে খাল দখলের মহোৎসব।
স্থানীয়দের আরেকজন বলেন, 'খাল রক্ষণাবেক্ষণ করা যাদের দায়িত্ব তার সঠিকভাবে পালন করছে না বললেই এই খালটা পরিতাক্তভাবে পড়ে আছে।'
আরেকজন বলেন, 'কিছুদিন আগে খাল খনন করেছে কিন্তু আবার কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। জরুরিভাবে খাল পরিষ্কার করা উচিত।'
এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, চলতি বছরে ভারানী খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জমিতে কৃষকরা সেচ দিতে পারেনি। তাই এবছর ফলন কম হয়েছে। দ্রুত খালটি দখল মুক্ত করা না গেলে প্রায় ৫শ' হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পিরোজপুর সদরের উপজেলা কৃষি অফিসার শিপন চন্দ্র ঘোষ বলেন, 'প্রায় ৫শ' হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমে যে ফসল আবাদ হয় তার ব্যাপক ক্ষতি হবে। আমরা আশা করছি কতৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বোর্ডের নয়। খনন করে এটি স্থানীয়দের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তারা। আর খালের অবৈধ স্থাপনা সরাতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান খালেক বলেন, 'খালের দুইপাশে অনাবাদি জমি আছে সেগুলো চাষের আওতায় আনার জন্য সেচ প্রকল্প চালু করলে অধিক ফসল ফলবে।'
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, 'আমরা ৬ কিলোমিটার খনন করেছি এবং এখানে ১৯ হাজার ঘনফুট মাটি কাটা হয়েছিল। এর চুক্তি মূল্য ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।'
সরকারি খাল ভরাট করে একের পর এক দোকানপাট নির্মাণ হলেও প্রশাসনের তদারকি না থাকায় বেড়ে চলেছে দখলের চিত্র। তাই, খালের স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের।