বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের মালিকানা প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে প্রাণিজ-অপ্রাণিজ ও তেল-গ্যাসসহ খনিজসম্পদ উত্তোলনের ক্ষমতা আছে উপকূল থেকে ৩৭০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।
সাগরের ২৪টি ব্লকে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল মজুত থাকার সম্ভাবনা থাকলেও তা উত্তোলনে নেযা হয়নি কার্যকর পদক্ষেপ। যদিও সাগরসীমা ঘেঁষে গ্যাস উত্তোলন করছে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার। তবে আশা জাগাচ্ছে তীব্র জ্বালানি সংকটের সময় গত মার্চের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পর সাড়া দিয়েছে ৭টি বিদেশি কোম্পানি। কিন্তু প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট বা পিএসসি মডেলে তারা কতোটা অগ্রসর হবে এখনো নিশ্চিত নয়।
ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশের ভূ-গর্ভে তেল-গ্যাস ছাড়াও কয়লা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, ধাতব খনিজ, নির্মাণ কাজের বালি, নুড়িপাথর, গন্ডশিলা, চীনামাটি, কাঁচবালি, ইটের মাটির সঙ্গে মিশ্রিত সম্ভাব্য খণিজ সম্পদের মূল্য অন্তত ২ ট্রিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার জিএসবির এক সেমিনারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার অভিযোগ করেন, যখন ভূগর্ভ থেকে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তেল-গ্যাস ছাড়া আর কোনো কর্তৃপক্ষই এগিয়ে আসেন না গবেষণায়।
তিনি বলেন, ওই বালির স্তরে কোনো মিনারেল আছে কি না। কোনো দামি বস্তু আছে কি না তা তো পরীক্ষা করি না। তাহলে আমি যে মাটির অনেক নিচ থেকে নমুনা নিয়ে আসি সেটাতে জিওলজিক্যাল সার্ভে করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে বাপেক্স, গ্যাস ফিল্ড ও বাংলাদেশ জিওলজিক্যাল সার্ভে'কে আলাদা করে নমুনা সংগ্রহ করতে হয় না।
একই কথা বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের। সেমিনারে তিনি বলেন, সরকারের এ খাতে বিনিয়োগের সদিচ্ছা থাকলেও দেশের খণিজসম্পদ আহরণ ও গবেষণায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ উদ্যোগ নেই। এ বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বাৎসরিক একটা ফান্ডও ব্যবস্থা করা যায় বলে জানান তিনি।
সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরকে অবশ্যই বাণিজ্যিক পথে অগ্রসর হতে হবে। আবিষ্কৃত খনিজ সম্পদ থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশ অধিদপ্তরটির গবেষণা ও পরীক্ষাগারের জন্য ব্যয় করা উচিত।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব আবিষ্কার আপনারা সরকারের কাছে দিয়ে দিচ্ছেন, সেখানেও যদি রয়্যালিটি ধরে রাখতে পারি, তাহলে এটি আপনাদের জন্য অর্থের একটি উৎস হয়। যার মাধ্যমে গবেষণার কাজ অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
খণিজ সম্পদ আহরণে অপার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বাংলাদেশের সামনে যেসব সংকট ও চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, সেজন্য বিদেশিদের দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।