এল নিনো চক্রের প্রভাবে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ দেখছে বিশ্ববাসী। এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার পর এবার বন্যার কবলে ইউরোপ। কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের পর ভারি বৃষ্টিতে প্লাবিত জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল। ব্যাডেন ওয়ার্টেমবার্গ প্রদেশের রাজধানী স্টুটগার্টসহ বেশ কয়েকটি শহর এখনো পানির নিচে।
ফ্রাঙ্কফুটে ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কবলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি গাড়ি। শুক্রবার মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর। শনিবারেও জারি করা হয়েছে ঝড়ের পূর্বাভাস। ভারি বৃষ্টিতে শুক্রবার রাতভর চেষ্টার পরেও অনেক সড়ক থেকে এখনো নামেনি পানি।
আকস্মিক বন্যার কবলে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস। সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির মধ্যে রাজ্যটিতে কয়েকটি মৌসুমী ঝড় আঘাত হানায় প্লাবিত হিউস্টনসহ বেশ কয়েকটি শহরের ৭শ' এর বেশি ঘরবাড়ি। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হিউস্টনের ২২০০ এর বেশি বাসিন্দা। স্যান জ্যাকিনটো নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ২৫ ফুট ওপরে। নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদে সরে যাবার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ব্রাজিলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির কোনো চিহ্ন নেই। মৃতের তালিকায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন নাম। ৮০ বছরের মধ্যে ভয়াবহ বন্যায় রিও গ্রান্ডে দো সুল রাজ্যের ২৫০ টির বেশি শহর এখনো বন্যার কবলে। ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে বেনতো গোলক্যালভেজ শহরের একটি বাঁধ। ইতোমধ্যেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে বাঁধের আশপাশের বাসিন্দাদের। ২৩ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
ভারি বৃষ্টিতে ভূমিধসের কবলে ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের বাসিন্দারা। জীবিতদের উদ্ধারে কাজ চলছে। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে মরদেহের সংখ্যা। ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত ১৩টি শহর। ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজারের বেশি স্থাপনা।
উত্তর আফ্রিকার দুই দেশ কেনিয়া ও তানজানিয়ায় বন্যায় প্রাণহানি প্রায় ৪০০ ছাড়িয়েছে। শুধু কেনিয়াতেই বন্যায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। রোববারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হিদায়া আঘাত হানার শঙ্কায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে ১৭৮টি বাঁধ ও জলাধার তীরবর্তী বাসিন্দাদের। প্রাণহানি এড়াতে সরকারের নির্দেশে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে নদী তীরবর্তী বস্তি। নিখোঁজদের সন্ধানে চলছে উদ্ধার তৎপরতা।
সরকারের তথ্য বলছে, ভয়াবহ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ নাগরিক। সাড়ে ২৭ হাজার মানুষের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১০০টির বেশি অস্থায়ী ক্যাম্প।
উত্তর আফ্রিকা যখন বন্যার কবলে, মধ্য আফ্রিকায় তখন তীব্র হচ্ছে তাপপ্রবাহ। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সেনাশাসিত দুই দেশ শাদ ও মালিতে। তাপপ্রবাহের কারণে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। সেনা সরকাররা সুপেয় পানির সংকট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবচিত্র পুরোপুরি উল্টো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামনের দিনে সংকট আরও ভয়াবহ হবার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
স্থানীয়না বলেন, মধ্যরাতে উঠে আমরা পানির ট্যাপ ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকি। দিনের বেলায় ট্যাপ থেকে পানি পাওয়া যায় না। অনেক দূরে গিয়ে আমাদের পানি কিনে আনতে হয়। এই গরমে পানির কষ্ট অকল্পনীয়। আশপাশে কোথাও পানি পাচ্ছি না। বাইরে থেকে পানি কিনে আনতে হচ্ছে।
মালির আবহাওয়া দপ্তরের প্রধান আমাদো দিয়াকিট বলেন, 'এটা কেবল সংকটের শুরু। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সংকট আরও বাড়বে। তাপপ্রবাহ, বন্যা, খরা ও দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো ঘন ঘন দেখতে পাওয়া যাবে। শুধু মালিই নয়, পুরো পৃথিবী প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হবে।'
ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপের প্রতিবেদন বলছে, পশ্চিম আফ্রিকা ও সাহেল রাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণ মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস।