মৌসুম শেষ হওয়ার পরও বৃষ্টির কারণে গেল বছর মহারাষ্ট্রে নষ্ট হয় বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ, যার জেরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০ রুপি থেকে বেড়ে সেপ্টেম্বরে বিক্রি হচ্ছিল ৬০ রুপি দরে। ১৫ মাসের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নাজেহাল সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে নির্বাচনের আগে স্বস্তি ফেরানোর লক্ষ্যে সে সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিশ্ববাজারে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার।
এরই ধারাবাহিকতায় গেল বছর আগস্টে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি, রপ্তানি শুল্ক আরোপ, সবশেষে ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে নয়া দিল্লি। গত ৩১ মার্চ সে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানোও হয়েছিল। সে সিদ্ধান্ত বদলে অবশেষে এলো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বহু প্রতীক্ষিত ঘোষণা।
প্রায় চার মাস পর শনিবার (০৪ মে) পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ভারত। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ঠিক করেছে ৫৫০ ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচন সামনে রেখেই যেমন বাজার স্থিতিশীল করতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বিজেপি সরকার, ঠিক একইভাবে ভোটব্যাংক বড় করার লক্ষ্যেই আবার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মতো উল্টো পদক্ষেপও নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আগামী মঙ্গলবার যেসব রাজ্যে ভোট হবে, সে তালিকায় অন্যতম মহারাষ্ট্র। ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষ এ রাজ্যটি। ভোটের তিনদিন আগে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানালো নয়া দিল্লি। এ পদক্ষেপে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন মহারাষ্ট্রের রপ্তানিকারকরা। ৭ মে'র ভোট হবে মহারাষ্ট্রের 'অনিয়ন বেল্ট' হিসেবে পরিচিত পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকাগুলোতেই।
পেঁয়াজ রপ্তানিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ ভারত। রান্নার পেঁয়াজ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে হুলুস্থূল নতুন নয়। পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাবে সরকার বদলে যাওয়ারও ইতিহাস রয়েছে দেশটিতে। ১৯৮০ সালের সপ্তম সাধারণ নির্বাচনকে প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীই আখ্যায়িত করেছিলেন 'পেঁয়াজের নির্বাচন' বলে। ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বেই স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ১৯৭৭ সালে প্রথম পরাজয় দেখা কংগ্রেস আবার তার হাত ধরেই ক্ষমতায় ফিরেছিল ১৯৮০ সালে। ১৯৯৮ সালে দিল্লির নির্বাচনে বিজেপি'র পরাজয়ের পেছনেও বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি।
২০২২ সালে বিশ্ববাজারে ৫২ কোটি ৪৬ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস ও চীনের পর তালিকার তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভারত। সে বছর দেশটির মোট রপ্তানি পণ্যের প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশই ছিল পেঁয়াজ। ভারতীয় পেঁয়াজের বড় অংশই কেনে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।