স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

ভ্রাম্যমাণ দোকানের শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা

টানা তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস হলেও কর্মবিরতির সুযোগ নেই শ্রমজীবীদের। কাজের প্রয়োজনে নিয়মিত বের হতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। আর তপ্ত দুপুরে ভ্রাম্যমাণ দোকানের শরবতে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। আর এসব দোকানের শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা।

সকাল থেকেই মাথার ওপরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে গ্রীষ্মের জলন্ত শিখা। আর এই ঝলসানো তাপে কিছুটা স্বস্তি চায় গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানে তৈরি ঠান্ডা শরবতে গলা ভেজাচ্ছেন শ্রমজীবীরা।

শুরুতেই কাঁচের গ্লাসে এক এক করে দেয়া হয় চিনি, বিটলবণ, লেবুর রস ও বিভিন্ন স্বাদযুক্ত পাউডার। পরে এতে যুক্ত করা হয় বরফ গলা ঠান্ডা পানি। আর এভাবেই তৈরি হয় একগ্লাস লোভনীয় ম্যাংগো বা অরেঞ্জের স্বাদযুক্ত শরবত।

রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ যখন ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী, তখন ক্লান্ত শরীরকে খানিকটা প্রশান্তি দিতে এসব শরবতে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী, রিক্সাচালকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। তাদের বেশিরভাগই জানেন না এই ঠান্ডা বরফে তৈরি শরবতে কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন তারা।

ক্রেতারা বলেন, গরমের মধ্যে আমরা এ শরবত প্রায়ই খাই। কিন্তু এটাতে ক্ষতি হয় কিনা জানি না। শরবতে ঠান্ডা পানি থাকে, তাই কি মেশায় সেটা এতোটা খেয়াল করি না। যখন খুব বেশি তৃষ্ণা পায় তখন চিন্তা না করেই খেয়ে ফেলি।

ক্রেতারা না জানলেও দোকানে শরবত তৈরির পরিবেশ ও এতে ব্যবহৃত বরফ সংরক্ষণের চিত্রই বলে দেয় তা আসলে কতটা অস্বাস্থ্যকর। এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শরবত বিক্রেতাদের।

শরবত খেয়ে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। ছবি: এখন টিভি

তারা বলেন, সাবমারসেবল পাম্পের পানি ও বরফ দিয়ে শরবত বানাই। অতিরিক্ত গরম হওয়ার কারণে আমাদের বেচাবিক্রিও খুব ভালো হচ্ছে।

নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকার কয়েকটি বরফ কারখানায় বরফ তৈরি, সংরক্ষণ আর পরিবেশনে অস্বাস্থ্যকর ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ দেখা যায়। কখনো খালি পায়ে আবার কখনো নোংরা জুতা পায়েই তা টুকরো করে তুলে দেয়া হয় ক্রেতাদের হাতে। এছাড়া খাবার শরবতে ব্যবহারের জন্য মরিচাধরা পাত্র ও মেশিনেই গুড়ো করা হয় সেই বরফ।

বরফ বিক্রেতারা বলেন, 'আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাছের জন্য এ বরফ সরবরাহ করি। কিন্তু ঠান্ডা পানির শরবতের জন্যও কিছু ক্রেতা আসে। তবে আমাদের মাছ আর শরবতের জন্য আলাদা আলাদা পার্ট করা আছে।'

প্রতিদিন নগরীর এসব কারখানা থেকে বরফ নিতে আসছেন স্থানীয় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ঘোল, কুলফি ও শরবতের মতো পানীয় বিক্রেতারা। যেখানে একই পানি ও পাত্রে তৈরি হয় এসব বরফ। তবুও ব্যবসায়ীক স্বার্থে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পন্ন শরবতকে ভালো বলে দাবি করেন শরবত বিক্রেতারা।

নোংরা পরিবেশ ও পাত্রে তৈরিকৃত এসব বরফযুক্ত শরবত একদিকে যেমন বাড়াচ্ছে জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি। অন্যদিকে হয়ে উঠেছে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও জন্ডিসসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রধান কারণ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, 'এ খাবারগুলো গ্রহণ করার ফলে গরমজনিত কারণ ছাড়াও বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।'

অসহনীয় গরম থেকে বাঁচতে কোন রকম ভাবনা ছাড়াই শরবতের নামে যা খাচ্ছে সাধারণ মানুষ, তা নিয়ে ভাববার সময় এখনই। সেই সাথে এসকল বরফ কল সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।