মাথার ওপরে গ্রীষ্মের গনগনে সূর্যের তাপ যেন আগুন হয়ে ঝরছে। রোদে খা খা করা সড়কগুলোতে সীমিত হয়েছে যান চলাচল। ঠিক তখন নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় জলকেলিতে মেতেছে একদল শিশু-কিশোর। লেকের ঘোলা জলের এই ডুব সাঁতার খেলা অস্বাস্থ্যকর হলেও তাদের শৈশবের আনন্দে কোন ভাটা ফেলছে না।
অন্যদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে অসুস্থ শিশুদের কান্না আর আর্তনাদ উদ্বিগ্ন করে তুলছে স্বজনদের।
প্রতিদিনই ডায়রিয়া, পেটব্যথা, জ্বর-সর্দি, বমিসহ নানা সমস্যা নিয়ে সেবা পেতে হাসপাতালে যাচ্ছেন ৫০ থেকে ৬০ জন শিশু ও তাদের অভিভাবকরা। মাত্র ৬৬টি শয্যার বিপরীতে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি চারগুণ বেশি রোগী। ফলে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছেন অনেকে। অসহনীয় গরমের পাশাপাশি মশার উপদ্রবে বেড়েছে ভোগান্তি।
অভিভাবকদের একজন বলেন, 'সকালে এসে হাসপাতালের বেড পায়নি এখন বাহিরে মেঝেতে চিকিৎসা চলতেছে।'
আরেকজন বলেন, 'বাচ্চাকে ৪ দিনের মতো ভর্তি করেছি ডায়রিয়া, জ্বর নিয়ে। এখনো ঠিক হয়নি। হাসপাতালে বেড পাওয়া যাচ্ছে না।'
বিভাগীয় এই হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওষুধ, যাতায়াতসহ বাড়তি ব্যয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্নবিত্তদের।
অভিভাবকদের আরেকজন বলেন, 'ওষুধ শুধু হাসপাতাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে। টেস্টগুলো বাহিরে থেকে করতে হচ্ছে।'
আরেকজন বলেন, 'রক্ত পরীক্ষা করতে দিয়েছিল আমি বেসরকারি একটা হাসপাতাল থেকে করেছি। সেখানে ১৫শ’ টাকার মতো খরচ হয়েছে।'
এদিকে অতিরিক্ত রোগীর চাপে সেবা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এমন অবস্থায় চলমান তাপপ্রবাহে শিশুদের সুস্থ রাখার নানা পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শাহিদা ইয়াসমিন বলেন, 'শিশুরা যেন বাহিরে গিয়ে ছায়ায় খেলাধুলা করে। খুব প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের বাড়ির বাহিরে না যাওয়ায় ভালো। এছাড়া তাদেরকে নরমাল পানি ঘন ঘন পান করাতে হবে।'
রাজশাহীতে এ পর্যন্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে শিশুদের পাশাপাশি অসুস্থ হচ্ছেন অন্যরাও।