ধানের মৌ মৌ গন্ধে উন্মাতাল হাওরের বাতাস। কিশোরগঞ্জের হাওরের বুকে যতদূর চোখ যায় বিস্তৃত জলাভূমিতে ঢেউ খেলছে সোনালি ফসল। যা কেবল ঘরে তোলার অপেক্ষা।
সোনালি ফসলে ভরে উঠেছে কৃষকের মাঠ। আবহাওয়া আনুকূলে থাকায় এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের বাধ ভাঙ্গা উল্লাস। আর তাইতো হাওরের বুকে শুরু হয়েছে ধান কাটার মহোৎসব।
জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলি হাওর অঞ্চলের বেশিরভাগ আবাদি জমি বছরের ছয় মাস থাকে পানির নিচে। তবে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কৃষক এই জমিতে আবাদ করেন বোরো ধান। যা হাওর পাড়ের কৃষকদের আয়ের অন্যতম উৎস আর সারাবছরের খাদ্যের যোগান। চলতি বছরে আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলনও হয়েছে ভাল। তাইতো পরম যত্নে কৃষান-কৃষানীরা ব্যস্ত তাদের সপ্নের ফসল ঘরে তুলতে।
হাওরের একজন কৃষক বলেন, 'এবারের মতো কোনো সময় ফসল কাটতে শান্তি পাইনি। কারণ সবসময় পানির মধ্যে ধান কাটতে হতো।'
যদিও অতিমাত্রায় গরমে শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে যা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলছেন স্থানীয় চাষিরা। তবে অন্যান্য বছর বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আসতে শুরু করলেও এবছরও সে পরিমাণ কম। যদিও চলতি বছর বন্যা আর অতিবৃষ্টি না থাকায় স্বাচ্ছন্দে ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। পাশাপাশি ধানের ন্যায্য মূল্যে নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কৃষক শ্রমিকের একজন বলেন, 'অতিরিক্ত গরমের মধ্যে ধান কাটতে অসুবিধা হচ্ছে।' আরেক কৃষানী বলেন, 'ফলন হয়েছে ঠিকই কিন্তু দাম ভালো পাবো কিনা চিন্তায় আছি।'
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গেল কয়েকবছর ধরেই কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এবছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৯০ ভাগ ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, 'উঁচু-নিচু এইটা হাওরের একটা বড় সমস্যা। অতি বৃষ্টি হলে ধান ডুবে যায়। এর ফলে কৃষকরা নিচের দিকে ধান কেটে উপরের দিকে আসছে। আমরা আশা করছি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৯০ ভাগ ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা।'
২০২১ সালে জেলায় ধান থেকে উৎপাদন হয় ৭ লাখ ১২ হাজার ২৯১ টন চাল। যার বাজার মূল্যে ছিল প্রায় ২ হাজার ৮শ' ৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ৭ লাখ ২২ হাজার টন চালের বাজারমূল্যে ছিল ২ হাজার ৮শ' ৮৮ কোটি টাকা। আর গেল বছর কিশোরগঞ্জের হাওরে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। যেখানে উৎপাদন হয় প্রায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৩০ টন চাল। যাতে বাণিজ্য হয় ২ হাজার ৯শ' ৮০ কোটি টাকার।