২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় কুকি-চিন। সে সময় টাকার বিনিময়ে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরক্বীয়াকে প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগ উঠে পাহাড়ি এ সংগঠনের বিরুদ্ধে। তখন অভিযানে দুই সংগঠনের অনেকে গ্রেপ্তার হয়।
এরপর সংগঠনটির সদস্যদের শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ এক বছর ধরে আলোচনা চলছিলো। সবশেষ ৫ মার্চ বৈঠক হয়, আগামী ১৬ এপ্রিল আরেকটি বৈঠকের পর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের কথা ছিলো তাদের। তবে তার আগে আবারও হঠাৎ ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট, অপহরণের ঘটনা নতুন রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাহাড়ি সংগঠনগুলোর এভাবে বড় অংকের টাকার জন্য মরিয়া হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। তাদের মতে, পাশের দেশ মিয়ানমারে চলমান অস্থিরতায় কোন পক্ষ থেকে বিপুল অস্ত্র কেনার জন্য বড় অংকের টাকার প্রয়োজনে এ হামলা হতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা হয়তো মনে করেছে, এটি সফট টার্গেট। এখানে প্রতিবন্ধকতা কম থাকবে, একইসঙ্গে কিছু টাকা-পয়সাও পাওয়া যাবে। এছাড়া তারা যদি শান্তি আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করতে চায়, তাহলে অস্ত্র যোগাড়ের অর্থের জন্য ডাকাতিও করতে পারে।’
এ ঘটনার পর অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে কুকি-চিনের সঙ্গে চলমান সরকারের শান্তি আলোচনা। এই বিশ্লেষক মনে করেন, শান্তি আলোচনা চলায় সংগঠনটির ওপর সরকারের নজরদারি শিথিলতার সুযোগ নিয়েছে তারা।
বান্দরবান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী এই পাহাড়কে পুঁজি করে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান বলেন, ‘পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব অত্যন্ত সক্ষম। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে একদিনের মধ্যে কেএনএফকে নির্মূল করা সম্ভব।’
কুকি-চিনের সঙ্গে কয়েক দফা সংঘাতে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে আতংক তৈরি হয় বান্দরবানে। এবার সে অস্থিরতা ও আতংকে নতুন মাত্রা যোগ হলো বলে মনে করেন পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিরা।
তবে এ ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনার দায় স্বীকার বা অস্বীকার করে নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনও কোন বিবৃতি দেয়নি কুকি-চিন।