দেশে এখন

রমজানে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুড়ির কারিগররা

বছরের বারোমাসই মুড়ির চাহিদা থাকলেও রমজান মাসে তা বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ। তাই মুড়ির চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বরিশালের মুড়ি তৈরির কারিগররা। তবে বর্তমানে হাতে ভাজা মুড়ির বাজার অনেকটাই চলে গেছে কল কারখানার দখলে।

লবণে ভেজানো মোটা চাল চুলার মুখে একটি পাত্রে বসিয়ে আগুনের তাপে শুকিয়ে নেন বরিশালের দপদপিয়া ইউনিয়নের আব্দুস সোবাহান হাওলাদার। এরপর সেই চাল তুলে দেন গরম বালুতে। আর সেই চাল বালুতে নাড়া দিলেই তৈরি হয়ে যায় সাদা ধবধবে মুড়ি। বংশপরম্পরায় এভাবেই মুড়ি ভেজে চলছে তার সংসার।

একসময় হাতে ভাজা মুড়ির বেশ কদর থাকলেও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কমতে শুরু করেছে এই হাতে ভাজা মুড়ির কদর। চাহিদা কমার সাথে সাথে পেশা বদলাচ্ছেন এ পেশার কারিগররা। আগামীতে সরকারি চাহিদা না পেলে ধীরে ধীরে হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই হাতে ভাজা মুড়ি।

মুড়ির কারিগর সোবাহান হাওলাদার। ছবি: এখন টিভি

একসময় সোবাহান হাওলাদারের মত এই গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবার মুড়ি তৈরি করলেও এখন তা হাতে গোনা কয়েকজন করেন। খরচও বেড়েছে বেশ। আগে ৫০ কেজি মুড়ি ভাজতে খরচ হতো ১০০ টাকা। আর এখন সেই খরচ দাঁড়িয়েছে ২৫০ টাকায়। যদিও আগে ৫০ কেজি মুড়ি ভাজলে আয় হত ৪০০ টাকা আর এখন হয় ৬০০ টাকা। তবে দাম বাড়লেও হাতে ভাজা মুড়ির কদর কমায় বিপাকে এই পেশার জড়িতরা।

সোবাহান বলেন, 'হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা এখনও আছে। কিন্তু হাতে ভাজা মুড়ির দাম বেশি। এ জন্য হাতে ভাজা মুড়ি নেয় কম, মেশিনের মুড়িই বেশি কিনে সবাই।'

বর্তমানে হাতে ভাজা মুড়ির বাজার অনেকটাই চলে গেছে মিল কারখানার দখলে। রমজানে চাহিদা বাড়ায় ব্যস্ততা সেখানেও। প্রতিটি মিলে ১৫ থেকে ১৭ জন শ্রমিক ৩টি মেশিনে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ মণ মুড়ি তৈরি করেন।

একজন শ্রমিক বলেন, 'ধান কিনে অটো রাইস মিলে দিয়ে সেখান থেকে চাল করে নিয়ে আসি। তারপর একটা মেশিনে চালের সাথে লবণ পানি মেমাই। এরপর আরেকটা মেশিনে দিয়ে চাল শুকিয়ে নেই। তারপরের মেশিনে আমরা মুড়িটা ভাজি।'

মেশিনে ভাজা হচ্ছে মুড়ি। ছবি:: এখন টিভি

এদিকে চাহিদা বাড়ায় দপদপিয়া ইউনিয়নের জিরো পয়েন্টে গড়ে উঠেছে ৫টি মুড়ির কারখানা। যেখানে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ মণ মুড়ি। যার প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এসব মুড়ি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ঢাকা, কুষ্টিয়া, খুলনা, ভোলা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিদিন ৫টি কারখানায় বেচাকেনা হয় প্রায় ৫০০ মণ মুড়ি। যার বাজার মূল্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এখান থেকে প্রতি মাসে লেনদেন হয় প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার মুড়ি।

রমজানে প্রতিটি পাইকারি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মুড়ি। নগরীতে প্রকারভেদে মোটা মুড়ি প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা এবং চিকন ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ধান ও চালের উপর অনেকটাই নির্ভর করে মুড়ির উৎপাদন ও দাম। তাই ধান ও চালের দাম কমলে মুড়ির উৎপাদন ও বেচাকেনাও বাড়বে একইসাথে কমবে মুড়ির দাম বলছেন ব্যবসায়ীরা।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর