সবুজ বৃক্ষ শোভায় সাদা বকেদের আড্ডা জমে কর্ণফুলী নদীর বাকলিয়া চরে। পাশেই মাছের খোঁজে পানকৌড়িদের ডুবসাঁতার। মাঝে মাঝে দৃষ্টি জুড়ায় ঝাঁক বেধে উড়ে যাওয়া পরিযারী পাখির দল। অন্যপ্রান্তে দৃষ্টিনন্দন ফড়িংয়ের উড়াউড়ি, তৃণভোজ আর জলকেলিতে ব্যস্ত থাকে মহিষের পাল।
তবে অচিরেই মানুষের বর্জ্যে ঢাকা পড়বে তাদের এ আবাসস্থল। কারণ প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের এই অনন্য আধারে বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
১৯৩০ সালে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের পর ধীরে ধীরে কর্ণফুলী নদীর মাঝে জেগে ওঠে চর। স্থানীয়দের কাছে যা বাকলিয়া চর নামে পরিচিত। তারা জানান, ১০৫ একরের এ চর অমাবস্যা-পূর্ণিমায় পানিতে তলিয়ে যায়। এমন চরে বর্জ্য শোধনাগার হলে তা হবে পরিবেশ বিধ্বংসী। কোন যুক্তিতে বর্জ্য শোধনাগার করা হচ্ছে, সে প্রশ্নও তুলেছেন পরিবেশবাদী ও সাম্পান মাঝিরা।
কর্ণফুলী নদী গবেষক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, 'কর্ণফুলী একটা আলাদা সত্তার নদী। এই সত্তায় তারা আঘাত করছে। পৃথিবীর কোথাও নদীর মাঝখানে চরের উপরে এমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নাই।'
এই চরে ১৫৫ প্রজাতির উদ্ভিদ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। ঋতুভেদে ঝাঁকে ঝাঁকে এখানে নামে দেশি ও পরিযারী পাখির দল। তাই এখানে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলার দাবি পরিবেশবাদীদের।
তারা বলেন, এখানে যদি একটা পিকনিক স্পট তৈরি করা হয়। তাহলে সবাই ফি দিয়ে পিকনিক করবে। এটা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হবে।
চরে বর্জ্য শোধনাগার করতে ভূমি বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু করছে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান বলেন, 'এই পরিকল্পনা বন্ধ করা না হলে আমরা সিটি করপোরেশন ঘেরাওসহ আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে রিট মামলা করবো।'
তবে সিটি করপোরেশন বলছে, বর্জ্য থেকে জ্বালানি প্রকল্পের আওতায় এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই । তবে নদীর জন্য হুমকি হলে পুনরায় ভেবে দেখা হবে।