শিক্ষা
দেশে এখন

অগ্নিঝুঁকিতে রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

কেবল মার্কেট, আবাসিক ভবন কিংবা রেস্তোরাঁ নয়, রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। ফায়ার সার্ভিসের সবশেষ তালিকার তথ্য বলছে- তেজগাঁও এলাকার ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবই আগুনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক প্রতিষ্ঠান জানেই না- তারা ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আছে।

চুড়িহাট্টা থেকে বঙ্গবাজার, কৃষি মার্কেট থেকে বনানী, সবশেষ বেইলী রোড। বারবার আগুনের ভয়বহতার শিকার নগরীর আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক ভবন। অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ কিংবা সর্বস্ব হারানোর এ ট্রাজিক গল্পগুলো ওঁৎপেতে থাকে চারপাশে। তবুও ঠিক হয় না কিছুই। বছর ঘুরে কেবল দীর্ঘ হয় ঝুঁকির তালিকা।

রাজধানীতে এমন ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফায়ার সার্ভিসের সবশেষ তালিকা অনুযায়ী, প্রায় ১ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৮টি সন্তোষজনক হলেও বাকি সবগুলোই রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায়। এরমধ্যে তেজগাঁও এলাকার ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবগুলো আগুনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কতটুকু জানানো হয়?

শিক্ষার্থীরা বলেন, 'অগ্নি নিরাপত্তার ও বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কিছু বলে নাই। আমরা তেমন কিছু জানি না। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফায়ার সার্ভিসকে কল দেয়ার চেষ্টা করবো।'

সার্ভিস অফিসিয়ালি না জানানোয় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানান বিজি প্রেস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনজুমান আরা লাইজু। বলেন, 'ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ এটা আমাদের মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। তবে অফিসিয়ালি বলা হয়নি।'

কোন কোন প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান জানেই না যে তারা ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আছে।

সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হক বলেন, 'আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা জানি না। কারণ প্রত্যেক বছর আমাদের এখানে মহড়া হয়, ফায়ার সার্ভিস এসে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়। তাহলে আমরা কেন ঝুঁকিপূর্ণ হবো!'

শুধু স্কুল নয়, তালিকায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ও। আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজের একাডেমিক ও আবাসিক ভবন।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, 'আমরা সরকারিভাবে এখনো এমন কোন পত্র পাইনি। তবে কলেজের আবাসিক হলগুলো জরাজীর্ণ হয়ে আছে।'

কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের দাবি সব প্রতিষ্ঠানকেই নোটিশ দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়ে থাকে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'শতভাগ সত্য যে আমাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। খুঁজলে অবশ্যই কিছু নোটিশ পাবেন।'

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব পরিকল্পনা পাস করা হয় তা যথাযথভাবে মেনেই নির্মাণ করার পরামর্শ দেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক। বলেন, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবশ্যই যথাযথ নিয়ম মেনে নির্মাণ এবং অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।'

এদিকে ঝুকিঁপূর্ণ ভবনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেয়ার কথা জানালেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। বলেন, 'ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলে নিদির্ষ্ট তালিকাটা নেয়ার কথা বলবো। তখন আমাদের ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে। প্রয়োজনে আবার নতুন করে নির্দেশনা দিবো।'

কোন একটি বহুতল ভবনের নিচ তলায় স্কুল চলছে, বেইজমেন্টকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লে গ্রাউন্ড হিসেবে, এমন চিত্র রাজধানীর অনেক এলাকাতেই দেখা যায়। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের কথা মাথায় রেখে এখনই সময় স্কুলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর