সুই আর সুতার মেলবন্ধনে দর্জির বাড়ি এখন সরগরম। সঠিক মাপ আর নকশা নিয়ে দিনরাত আলোচনা চলছে। তেজগাঁওয়ের এক গলিতে ১০ বছর ধরে দর্জির কাজ করা পলি খাতুন জানালেন কেন এতো ব্যস্ততা?
পলি বলেন, 'ছয় বা সাত রোজা পর্যন্ত অর্ডার নেই। তারপর আর নিতে পারি না। এখন একদিনে ২০ সেট কাপড় বানানো হয়। রোজায় আমরা কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ সেট কাপড় সেলাইয়ের চেষ্টা করি।'
তেজগাঁওয়ে ১০ বছর ধরে কাজ করা দর্জি পলি খাতুন। ছবি: এখন টিভি
শবে বরাতের পর থেকেই ঈদ কেন্দ্র করে নতুন পোশাক বানানোর অর্ডার আসা শুরু করায় বেশ ব্যস্ত সময়ই পার করছেন দর্জির দোকানের কারিগররা।
একজন কারিগর বলেন, 'একটা নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে কাজ করি। যে আমাদের দৈনিক কয়টা কাজ করতে হবে। একটা বা দুইটা রোজা গেলে অর্ডার অনুযায়ী আমরা গুনবো যে দিনে কয়টা করে করতে হবে। তার ওপর নির্ভর করবে যে আর কোনো অর্ডার নেয়া যাবে কি-না।'
শুধু পাড়া-মহল্লা নয়, রাজধানীর বড় বড় শপিংমলেও ব্যস্ততা বেড়েছে। যেমন প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, যেখানে ক্রেতারা পছন্দসই কাপড় এবং দর্জির বাড়ি একই ছাদের নিচে।
রমজান শুরুর আগেই পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন নিশা জাহান নামের এক নারী। দোকানের বিল চুকিয়ে সরাসরি দর্জির দোকানে চলে যান।
পরিবারের জন্য কাপড় বানাতে য়োর মজুরি পরিশোধ করছেন নিশা। ছবি: এখন টিভি
নিশা বলেন, 'শেষের দিকে কাজের অনেক চাপ থাকে। সেজন্য একটু আগেই কিনে রাখা ভালো। কাপড়ের মধ্যে একটু ডিজাইন করতে চাইলে আগেই কাজ করানো ভালো।'
পছন্দমতো ডিজাইনে জামা বানাতে গজ কাপড়ের খোঁজে এসেছেন অনেকেই। তাই ভিড় বেড়েছে গজ কাপড়ের দোকানেও। মাইসরি, জয়পুরি প্রিন্ট থেকে শুরু করে ঈদকে ঘিরে আনা হয়েছে নতুন সব কালেকশন। ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত গজ কাপড় বিক্রি হচ্ছে এখানে।
ভিড় এড়াতে এবং ঈদের সময় বাড়তি মজুরির চাপ থাকে তাই অনেকেই রমজানের আগেই কাপড় বানানোর কাজ সেরে ফেলতে এসেছেন।
ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, কাঁটাবন এসব এলাকায় কাপড়ের ধরন এবং ডিজাইন অনুযায়ী ব্লাউজের মজুরি রাখা হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত। আর সালোয়ার কামিজের মজুরি ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। নতুন নতুন অর্ডারের চাপ বেড়েছে এবং এই চাপ বেশি হলে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেবেন ১০ রোজার মধ্যেই; তখন মজুরিও বাড়বে কিছুটা। তবে কারিগররা জানালেন, রেডিমেড কাপড়ের ভিড়ে আগের থেকে ক্রেতা কম গেছে তাদের।
নতুন অর্ডার নিতে ব্যস্ত কারিগররা। ছবি: এখন টিভি
একজন কারিগর বলেন, 'আমাদের টেইলার্সের একটা নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি থাকে। একটা সময়ের ভেতরে দেখা যায় আমরা ৩ হাজার পিস কাপড় তৈরি করতে পারি। এর বেশি নিলে তো হয় না। সেজন্য সে অনুযায়ী অর্ডার নিয়ে থাকি। এখন বেশিরভাগ মানুষই রেডিমেড কাপড় কিনে। সেজন্য আগের চেয়ে একটু চাপ কম।'
গুলশান, বনানী এলাকায় যেন দম ফেলার সময় নেই দর্জির দোকানের কারিগরদের৷ কেউ মাপের অর্ডার নিচ্ছেন; আবার কেউ কাপড়কে মাপ অনুযায়ী কাটছেন।
এসব এলাকায় গজ কাপড় আর সেলাইয়ের কাজ করা হয় একসাথেই, তাই কাপড় নিয়ে অন্য কোথাও দৌড়ঝাঁপের দরকার পড়ে না ক্রেতাদের। তবে এখানে মজুরি শুরু হয় ১ হাজার থেকে যা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গড়ায়।
তাড়াহুড়োতে কাপড় সেলাই অনেক সময় ভুল হয়; যা ঈদের আনন্দকে নষ্ট করতে পারে। সেই চিন্তা থেকেই অনেকে আগেভাগে বানিয়ে ফেলছেন তাদের পছন্দের জামা-কাপড়।
দর্জির বাড়ির এই ব্যস্ততাই জানান দিচ্ছে যে সামনে ঈদ আসছে। এই ব্যস্ততা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।