দেশে এখন
0

থামছেই না অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার

গ্যাস সিলিন্ডার পরিবহনে বিধিমালা থাকলেও তার বেশিরভাগ নির্দেশনা উপেক্ষিত। প্রাপ্তির সহজলভ্যতায় ঝুঁকি ভুলে বহুল ব্যবহারে প্রতিনিয়ত অনিয়ম বাড়ছে।

রাজধানীর বেশিরভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁয় সিলিন্ডার ব্যবহার করা হলেও নিয়মের যেন তোয়াক্কা নেই। কখনো উত্তপ্ত চুলার খুব কাছে, কখনো ফুটপাতে অনিরাপদ জায়গায় দেদারসে চলছে এর ব্যবহার। অনুমতি একটির থাকলেও সেখানে ব্যবহার হচ্ছে একাধিক সিলিন্ডার। আবাসিক ভবনে সিলিন্ডার ব্যবহার নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।

গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীরা বলেন, ‘দোকানের ভেতরে রাখা তো রিস্ক, তাই বাইরে রাখা হয়েছে। আর অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। এছাড়া কাজ শেষ হলে সিলিন্ডারগুলো ভেতরেই রাখা হয়।’

বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির পর বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে বাণিজ্যিক এলাকার সব রেস্তোরাঁর মালিকদের শঙ্কা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন হাজারও ক্রেতার ভিড়ে সরগরম থাকা রেস্টুরেন্টের বাইরে এখন ঝুলছে তালা।

রাজউক, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার অভিযান ও তদারকিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আবার উন্নয়ন কাজের দোহাই দিয়ে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দায় এড়াচ্ছেন অনেক রেস্তোরাঁর মালিক-কর্মীরা। এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অগ্নিনির্বাপকের ঘাটতি, জরুরি বহির্গমন পথের অভাব ও অফিসের অনুমতিতে রেস্তোরাঁ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

রেস্টুরেন্ট ফাঁকা পড়ে আছে। ছবি: এখন টিভি

রেস্তোরাঁ মালিকরা বলেন, ‘আমরা অগ্নিনিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ রেখেছি। এছাড়া কোনও গ্যাপ আছে কিনা এই শঙ্কায় ভবন মালিকরা রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে বলেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক সাপেক্ষে অনুমতি পেলে আমরা আবার চালু করবো।’

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, ভবন মালিকের পাশাপাশি রেস্তোরাঁ মালিকরা সচেতন হলে খুবই ভালো। যেখানে ঘাটতি পাওয়া যাবে বা যাচ্ছে, সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ভোক্তারা বলছেন, শহুরে জীবনে প্রিয়জনের সঙ্গে আলাপচারিতা, অবকাশযাপনে রেস্টুরেন্টের বিকল্প কম জায়গা আছে রাজধানীতে। কিন্তু এখন তাতে নিশ্চিত করতে হবে অগ্নিসহ ভবনের সার্বিক নিরাপত্তা। এছাড়া গতবছর বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে আগুনের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় উচ্চ ঝুঁকিতে চিহ্নিত ৫৮টি মার্কেটেও সংস্কারের অভাবে নিরাপত্তা ঘাটতির কথা জানান ভোক্তারা।

ভোক্তারা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই নিরাপত্তা চাই। আর এটি ভবন মালিকসহ মার্কেট ও রেস্তোরাঁর পরিচালকদের নিশ্চিত করতে হবে। আবার আমাদেরও ঝুঁকি বিবেচনা করে সচেতন হতে হবে যে, কোথায় যাবো আর কোথায় যাবো না।’

ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট। ছবি: এখন টিভি

রাজধানীতে একটি রেস্তোরাঁ স্থাপনে সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসক, রাজউক, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্তত ১২টি সংস্থার প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন। দুর্ঘটনার পর তাদের অভিযান কিংবা তদারকি দেখা গেলেও, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আগে এসব সংস্থার সমন্বয় ও পরিকল্পনা জরুরি বলে মনে করেন পরিকল্পনাবিদরা।

ইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রকৌশলী রানা মাসুদ বলেন, ‘প্রত্যেকটি ভবনের ধরন অনুযায়ী, সেখানে কী ধরনের সেবা প্রতিষ্ঠান থাকবে, ভবনের অফিসগুলোর আয়তন কেমন হবে সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন।’

গত এক দশকে সারাদেশে হোটেল-রেস্তোরাঁ বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। এ খাতে অন্তত ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। জিডিপিতে অবদান রাখা এ খাতকে সুরক্ষা দিতে প্রয়োজন টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সচেতনতা।