দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের বাজার পুরান ঢাকার ইসলামপুর। সারা বছরের পাশাপাশি ঈদকে কেন্দ্র করে এই এলাকার বিশাল বাজারের ব্যস্ততা শুরু হয় শবে বরাতের আগে। বাজারের বার্ষিক ব্যবসার প্রায় ৬০ শতাংশ হয়ে থাকে ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে।
দেশে তৈরি পোশাক এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা থান কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত হলেও এ বাজারে খুচরা কাপড়ের দোকানও রয়েছে। যেকোনও উৎসবকে কেন্দ্র করে তাই জমজমাট হয়ে ওঠে এ বাজার। বাজারের মধ্যভাগটি খুচরা বিক্রেতাদের জন্য বরাদ্দ। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোলাহলে সবসময় মুখর থাকে বাজারের এই স্থানটি। তবে পাইকারি বাজারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।
প্রতিবছর ঈদের প্রায় দেড় মাস আগেই ইসলামপুরে বেচাকেনা শুরু হলেও এবার তেমন জমে ওঠেনি। সার্বিক মূল্যস্ফীতি আর আমদানি ব্যয় বাড়ায় দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে প্রায় সব পণ্যে। এতে কমেছে বেচাকেনায়।
থ্রি পিসের ফাঁকা দোকানে যেন একমাত্র ক্রেতা টিটো হাওলাদার। নিজের দোকানের জন্য থ্রি পিস, শার্টের পিসসহ বেশকিছু পণ্য কিনতে পটুয়াখালী থেকে এসেছেন ইসলামপুরে। ঈদকে সামনে রেখে নতুন ডিজাইনের পোশাক খুঁজছেন তিনি।
টিটো হাওলাদার বলেন, 'সামনে আমাদের মৌসুম অর্থাৎ ঈদের জন্য কেনাকাটা করতেছি। কিন্তু গতবছরের তুলনায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি।'
তার মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা আসেন ইসলামপুরে। খুচরা পর্যায়ে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। তাই আগে থেকেই দোকানে নতুন মালামাল ওঠাতে তোড়জোড় ব্যবসায়ীদের। তবে বছর ব্যবধানে সব পণ্যের দাম বেড়েছে বলে দাবি তাদের।
এক ব্যবসায়ী বলেন, 'অন্যান্য বছর আমাদের বাজেট থাকে ৪ থেকে ৫ লাখ। কিন্তু এ বছর আমাদের তেমন বিক্রি নেই বলে ঝুঁকি নিতে পারছি না। আপাতত ৭০ হাজার টাকার কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছি। যদি বিক্রি ভালো হয় তাহলে শবে বরাতের পর আবার আসবো।'
প্রায় ৪০০ বছর পুরাতন এ বাজারে ছোট–বড় মিলিয়ে মার্কেটের সংখ্যা ১৪২টি। নিবন্ধিত দোকানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। সবমিলিয়ে এখানকার প্রায় ১০ হাজার দোকানে প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য হলেও ঈদকে ঘিরে তা শত কোটি টাকায় রূপ নেয়। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। গেল কয়েকমাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর ডলার সংকটে সব কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে কয়েকগুণ।
দোকানদাররা বলেন, 'আগে তো ঈদের দু'মাস আগে থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যাইতো। আর এখন তো মাঝে মাঝে বিসমিল্লাহই হয় না। ব্যবসা খুব খারাপ, সামনে রমজান ঈদ কিন্তু ক্রেতা নাই। অনেকেই আবার কাপড় অর্ডার করে তা বাতিল করেছে।'
২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে সরকার। সে বছরই কার্যকর হলেও তৎপরতা বেড়েছে গেল দু'বছর। এতে পণ্যের দামে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তেমনি বাণিজ্য কমেছে কোটি টাকার।
ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামসুল আলম বলেন, '১০ পয়সা লাভ করে যদি আমাদের সরকারকে ভ্যাট দিতে হয় তাহলে এই ব্যবসা চলবে না। একটা কাপড়ে যদি কয়েক দফায় ভ্যাট দিতে হয় তাহলে ৩০ টাকার কাপড়ের দাম পড়ে যাবে ৬০ টাকা। তাহলে এই কাপড় কিনবে কেন!'
এর আগে প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় বছরে ২৮ হাজার টাকা ভ্যাট দিতেন এসব ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন বিক্রিতে যে পরিমাণ মূল্য সংযোজন হয়, তার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয় তাদের।