দেশের অন্যতম প্রত্নস্থান কুমিল্লার শালবন বিহার। বিহারটির পাশে শাল ও গজারির ঘন বন ছিল বলে নামকরণ করা হয়েছে শালবন বিহার। খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দীর শেষ ও ৮ম শতাব্দীর শুরুতে দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বিহারটি নির্মাণ করেন।
ধারণা করা হয়, এটি বৌদ্ধদের একটি শিক্ষালয় ও ধর্মীয় তীর্থস্থান ছিল। এখানে পৃথিবীর প্রাচীনতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বলে ধারণা ঐতিহাসিকদের। ৭ম থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত তৎকালীন সময়ে ছড়িয়ে থাকা বিহারগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা করতেন। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও তিব্বত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, চীনসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধ সাধুরা এখানে আসতেন।
দর্শনার্থীরা এখানে আসেন মূলত বিনোদনের পাশাপাশি অপরূপ স্থাপত্য শিল্পের নির্মাণ, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও তৎকালীন সমাজের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য।বিহারে ঘুরতে আসা একাধিক দর্শনার্থী বলেন, 'আমরা তো ইতিহাস বইয়ে পড়েছি বাস্তবে এসে দেখা হয়নি। এখানে আসার পরে সত্যি মনে হচ্ছে, বৌদ্ধ ভিক্ষু কেন্দ্র ছিলো, মন্দির ছিলো । বেশ ভালো লাগছে আমাদের ইতিহাসকে জানতে পারছি।'
'এটি যেহেতু পর্যটন কেন্দ্র। এখানে যদি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে তাহলে দূরদুরান্ত থেকে যারা আসে তাদের জন্য সুবিধা হয় ।'
বর্গাকৃতির বিহারটির আয়তন প্রায় ১৬৭ বর্গমিটার। চারদিকের বেষ্টনীর দিকে পিঠ করে ১১৫টি কক্ষ রয়েছে বিহারে। কক্ষের দেয়ালগুলি ১৫ মিটার চওড়া। ধ্বংসপ্রাপ্ত শালবন বিহার খননে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। তার মধ্যে ৮টি তাম্রলিপি, প্রায় ৪শ' স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা, এছাড়াও অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক, টেরাকোটা, সিলমোহর, মাটির মূর্তি পাওয়া যায়, যা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬ মাসে বিহার ভ্রমণে আসে ২ লাখ ৪ হাজার দর্শনার্থী। জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বিহার ও যাদুঘরের টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৫৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৯০ টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব চিত্র।
গেলো ৪ অর্থবছরে শালবন বিহারের রাজস্ব।
কুমিল্লায় মাটির নিচে যেসকল স্থাপনা এখনও খনন বাকি সেগুলো উন্মোচনের কাজ চলছে। বিহারে দর্শনার্থীদের সেবায় নানামুখী পদক্ষেপের পরিকল্পনার কথা জানায়, প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর।
শালবন বিহারের কাস্টোডিয়ান শাহীন আলম বলেন, 'দর্শনার্থী বাড়াতে আমরা এই সাইটটির পরিচর্যাসহ নিয়মিত বিরতিতে সংস্কার কাজ করে যাচ্ছি। আর দর্শনার্থীরা যেন এই সাইট সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য আমরা সাইটের পাশেই তথ্য হালনাগাদ করে ইংরেজি ও বাংলায় স্থাপন করে রেখেছি।'
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম) সাইফুর রহমান বলেন, 'চারপাশে সমতল ভূমিতে নতুন নতুন কিছু প্রত্নস্থান গত দুই তিন বছরে খনন করেছি এবং শালবন বিহার, যাদুঘর এইগুলোর কিছু উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে আমরা একটা ওয়েবসাইটও তৈরি করেছি। যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে।'
শালবন বিহার ছাড়াও রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, লতিকোট বিহার, রানীর বাংলোসহ আরো কয়েকটি প্রত্নস্থান রয়েছে রয়েছে কুমিল্লায়। যা দেখতে আগ্রহ বাড়ছে দর্শনার্থীদের।