পরিবেশ ও জলবায়ু
দেশে এখন
0

পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধের পরিকল্পনা সরকারের

পরিবেশবান্ধব ব্লক ইটের ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ

একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা, অপরদিকে পাল্লা দিয়ে কমছে কৃষিজমি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, ২০০৮-২০১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র ১১ বছরে দেশে কৃষিজমি কমেছে ৪ লাখ একর। ১ কোটি ৯০ লাখ একর থেকে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ একরে। এরপর কেটেছে প্রায় ৫ বছর।

বছরের হিসাবে শুধু ইটভাটায় ১৩ কোটি মেট্রিক টন মাটির ব্যবহার হয়। এ হিসাব মাথায় রেখে ২০১৫ সালে সড়ক ছাড়া সরকারি সব নির্মাণকাজে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিপত্র অনুসারে, বছরভিত্তিক সনাতন ইট ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ২০১৯-২০ সালে ১০ শতাংশ, ২০২০-২১ সালে ২০ শতাংশ, ২০২১-২২ সালে ৩০ শতাংশ, ২০২২-২৩ সালে ৬০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ সালে ৮০ শতাংশ ও ২০২৪-২৫ সালে ১০০ শতাংশ। কতটুকু অর্জন হয়েছে লক্ষ‌্যমাত্রা?

কংক্রিট ইট বিশেষজ্ঞ আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, ‘স্থায়ীত্বের কথা যদি বিবেচনা করি তাহলে কংক্রিট ইটের বিকল্প নেই। আমাদের সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানায় যারা ভবন তৈরি করছে, তারা লেবার শ্রেণিকে এই ইট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে না।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১৫১টি ব্লক ইটের কারখানা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৮৮টি কারখানা হয়েছে। দেশের মোট প্রয়োজনের ৫ শতাংশও মেটাতে পারছে না কংক্রিট ইট। এর পেছনের কারণ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের অনীহাকে দেখছেন ঠিকাদাররা।

মাইশা কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘কংক্রিট ইট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা তো আছেই, কিন্তু এটি সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না।’

পরিবেশবান্ধব ইটের দিকে না ঝুঁকলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের মানুষদের ভোগাবে নানা রোগ। যার ক্ষতিপূরণ জীবন দিয়ে পরিশোধ করতে হবে এমন দাবি জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের। আর নানা রোগের হিসাবের খরচ অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

পরিবেশবিদ আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, একজন মানুষের চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হয়। ঢাকা শহরে প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি পরিবারের গড়ে একজন করে বায়ুদূষণের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন।’

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রাজধানী ঢাকা। এই দূষণের ৫০ শতাংশের বেশির জন্য দায়ী শুধু ইটভাটা। তাই সরকারি সব কাজে কনক্রিট ইট ব্যবহারে কঠোর হচ্ছে সরকার, বলছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘স্বীকার করতে হবে ২০২৫ সালে আমাদের একটি পরিকল্পনা ছিল। তবে এটি শুধু কাগজে-কলমে ছিল। কেননা সেটি বাস্তবায়নে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা এখন যেটা করছি, ২০২৮ সালের মধ্যে সরকারি সব কাজে ব্লক ইট ব্যবহার হবে।'

শুধু পরিকল্পনা করে কালক্ষেপণ নয়, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা।