এই সেনা অভ্যুত্থানের পর অন্তত ২৫ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারাদেশে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৭৮ হাজার ঘরবাড়ি। যে কারণে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের ওপর জান্তা সরকারের সন্ত্রাসী কার্যক্রম।
সংবাদ মাধ্যম ইরাবতী বলছে, এরমধ্যেই দেশটি পড়ে গেছে চরম সামাজিক, রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায়।
তিন বছরে দেশটিতে মানবিক সংকট পৌঁছেছে চরমে। চলতি বছরই মিয়ানমারের ১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। ২০২১ সালে জান্তা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এই সংখ্যা ছিলো ১০ লাখ। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পাশাপাশি বিশ্বের ক্ষুধার হটস্পট হিসেবে মিয়ানমারকে বিবেচনা করছে জাতিসংঘ। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুযায়ী, সেনা শাসিত মিয়ানমার এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি।
চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পরিসংখ্যান বলছে, মিয়ানমারে প্রায় ২০ হাজার রাজনৈতিক বন্দী আছেনস, যাদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজারই নারী। অন্যান্য সেনা শাসনের আমলেও এই সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়ায়নি। জান্তা সরকারের আমলে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ কারাব্যবস্থা হয়েছে মিয়ানমারের। নির্বাচিত নেতা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী আর বিভিন্ন পেশার সাথারণ মানুষ যারাই গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার আর স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছে, তাদেরই বন্দী করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর পোশাকে সন্ত্রাসীরা চালিয়ে গেছে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ আর গণহত্যার মতো অপরাধ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখের বেশি। এরমধ্যে ২৩ লাখ মানুষকে ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, দুর্নীতির দিক দিয়েও মিয়ানমার ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬২ তম।
গেলো বছরের মে মাসে প্রকাশিত মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টার এক রিপোর্ট বলছে, ২০২১ সাল থেকে ওই সময় পর্যন্ত অন্তত ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এর আগে, গত বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের মিয়ানমার সংক্রান্ত বিশেষ উপদেষ্টা পরিষদের তৈরি এ রিপোর্টে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেরাই বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র তৈরি করছে। এজন্য তারা অন্তত ১৩টি দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ পাচ্ছে। ১৩টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ফ্রান্সও রয়েছে।
মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী যেসব অস্ত্র তৈরি করছে, সেগুলোর মধ্যে আছে স্নাইপার রাইফেল, বিমানবিধ্বংসী কামান, গ্রেনেড, বোমা, ল্যান্ডমাইন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ব্যবস্থা। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর কয়েকটি দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার পরও এসব অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ হয়নি। এই অস্ত্র ব্যবহার করে নিজ দেশেরই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই করছে জান্তা সরকার। এতে জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রাণ হারাচ্ছেন বহু বেসামরিক মানুষ।