শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

প্রতিকূল আবহাওয়ায় কমছে লবণের উৎপাদন

আমদানির অনুমতিতে ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কা

প্রতিকূল আবহাওয়ায় দেশে ব্যাহত হচ্ছে লবণ উৎপাদন। প্রতি মাসে ২ লাখ টনের বেশি চাহিদার বিপরীতে গত আড়াই মাসে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬৭ টন। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়ায় ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা।

দেশের মোট লবণের চাহিদার ৯০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলায়। গত আড়াই মাসে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬৭ টন। যদিও প্রতি মাসে চাহিদা প্রায় ২ লাখ ১০ টন।

চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিছুটা দেরিতে মাঠে নেমেছেন লবণ চাষিরা। এর উপর সম্প্রতি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ঘন কুয়াশা ও পর্যাপ্ত রোদের অভাব। এতে উৎপাদন কমেছে স্বাভাবিকভাবেই।

এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ১ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। যা ইতোমধ্যে দেশে ঢুকেছে। আর এতে দ্বিমুখী সংকটে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। একদিকে ঘন কুয়াশাসহ প্রতিকূল আবহাওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। অপরদিকে সামনের দিনগুলোতে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা। ইতোমধ্যে লবণের দাম মণপ্রতি কমেছে দেড়শ' থেকে দুইশ' টাকা।

লবণ চাষীরা জানান, উৎপাদন ভালো হচ্ছে না কারণ আবহাওয়া এখন অনেক খারাপ। প্রতিদিন রোদ ওঠে না। তার জন্য লবণের দামও একটু কমে গেছে। আর লবণ উৎপাদনে অনেক অনেক টাকা খরচ হয়।

গত মৌসুমের এই সময়ে মাঠ পর্যায় প্রতিমণ লবণ ৬শ' টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪শ' থেকে সাড়ে৪শ' টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে দরপতন ঠেকাতে নতুন করে আমদানির অনুমতি না দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন চাষিরা। তবে মিল মালিকদের দাবি, আমদানির পরও চাষিরা বর্তমানে যে দাম পাচ্ছেন তাতে চাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।

ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমবায় সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম বলেন, 'গত বছর এসময় মোটামুটি লবণ প্রোডাকশনটা ভালো হয়েছিল। এবছর ওয়েদার একটু খারাপ হওয়ার কারণে আমাদের প্রোডাকশনটা একটু পিছনে যাচ্ছে। এখন এক মণ লবণ ৫৫০ টাকা দিয়ে কিনতেছি। যদি সিজনটা ভালো হতো চাষিরা আরও লাভবান হতো।'

কক্সবাজারে লবণ উৎপাদনের চিত্র

২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ টন। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লবণের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। উৎপাদনের মৌসুম ধরা হয় নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সময়কালকে। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাহিদার বেশি লবণ উৎপাদন সম্ভব হবে মনে করছে উন্নয়ন কার্যালয়। তবে লবণের দরপতন ঠেকাতে উৎপাদনের সাথে সাথেই বিক্রির বদলে সংরক্ষণ করে বিক্রির পরামর্শ কর্মকর্তাদের।

কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, আমরা আশা করছি সামনে যে আমাদের মূল সিজন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ এপ্রিল, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাবো।

তিনি আরও বলেন, 'যখন উৎপাদন বাড়তে শুরু করে, তখন স্বাভাবিক বাজারে দামটা কিছুটা কমে যায়। চাষিদের পরামর্শ দেই যে, আপনারা লবণগুলো তুলে একসাথে বাজারে বিক্রি না করে রেখে রেখে বিক্রি করেন।'

চাষিদের অভিযোগ, প্রতি বছর লবণ মৌসুমে দেশে চাহিদার বেশি উৎপাদন হলেও বিদেশ থেকে আমদানির পাঁয়তারা করে একটি পক্ষ। তবে এ বিষয়ে সরকার সচেতন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

গেল মৌসুমে কক্সবাজারের ৯ উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ চাষ করেছিলেন ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন চাষি।

এসএসএস