মিথেন গ্যাস নিঃসরণ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই যাত্রা শুরু করলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিলাসবহুল প্রমোদতরী। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি সমুদ্রসৈকত থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজটি আগামী এক সপ্তাহ দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে ঘুরে বেড়াবে প্রায় আট হাজার যাত্রী নিয়ে।
২শ' কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই প্রমোদতরীর নাম 'আইকন অব দ্য সিজ'। এক সপ্তাহের দীর্ঘ যাত্রা শতভাগ উপভোগ্য করে তুলতে ২০ তলা জাহাজটিতে রয়েছে ৭টি সুইমিং পুল, ৬টি ওয়াটার স্লাইডসহ সমুদ্রে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়াটার পার্ক, ৪০টির বেশি রেস্তোরাঁ, বার ও লাউঞ্জসহ বিনোদনের অসংখ্য ব্যবস্থা।
শনিবার(২৭ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মায়ামি সমুদ্রসৈকত থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করে ১২শ' ফুট দীর্ঘ বিলাসবহুল জাহাজটি। প্রমোদতরীর ব্যবসায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের হাত ধরে সাগরে নেমেছে আইকন অব দ্য সিজ। সাতদিনের যাত্রায় অতিথি হতে মাথাপিছু গুণতে হচ্ছে ১৭শ' থেকে শুরু করে সাড়ে ৯ হাজার ডলার পর্যন্ত।
সাগরের গভীর দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে ঘুরে বেড়াবে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাসম্পন্ন এ প্রমোদতরী। রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের দাবি, কার্বন নিঃসরণের প্রশ্নে নতুন জাহাজটি ২৪ শতাংশ বেশি দক্ষ।
আইকন অব দ্য সিজ এর প্রধান প্রকৌশলী স্টিগ এরিকসন বলেন, 'কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনতে হলে এর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করাও জরুরি। এই যাত্রায় এলএনজি'র মাধ্যমে এক ধাপ সামনে এগিয়েছি আমরা।'
কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে এক ধাপ এগিয়েছে বলে আইকন অব দ্য সিজ কর্তৃপক্ষ দাবি তুললেও, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে চলবে বলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নিঃসরণ করবে জাহাজটি, এমন শঙ্কা পরিবেশবিদদের।
ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশন এর পরিচালক ব্রায়ান কামার বলেন, 'জাহাজ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর একটি উপায় হলো এলএনজি ব্যবহার। কিন্তু যখন আপনি জলবায়ুতে এর প্রভাবের দিকে তাকাবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে আসলে এটা ভুল পথে পা ফেলা।'
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রশ্নে কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় মিথেন ৮০ গুণ বেশি ক্ষতিকর, যা পরিবেশে থেকে যায় ২০ বছরের বেশি সময়। আর সমুদ্রে জ্বালানি হিসেবে এলএনজি'র ব্যবহারে মেরিন গ্যাস অয়েলের চেয়ে ১২০ শতাংশ বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয়, যার অন্যতম মিথেন।
পরিবেশবিষয়ক সংস্থা স্ট্যান্ড আর্থ এর কানাডা শিপিং ক্যাম্পেইনার অ্যানা বারফোর্ড বলেন, 'আশা করছি, বিশ্বে এলএনজিচালিত শেষ জাহাজগুলোর একটি হবে আইকন অব দ্য সিজ। কারণ জলবায়ু সংকট সমাধানের উপায় মিথেন নিঃসরণ নয়।'
ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশন ও সহযোগী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২৪ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি বছর গড়ে প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ মিথেন নিঃসরণ হয় প্রমোদতরী থেকে।