বইমেলার কয়েকদিন বাকি থাকলেও প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন বলছেন প্রকাশকরা। তবে এবারও কাগজের বাড়তি দামে বইয়ের দাম বাড়ার আভাস মিলেছে। এদিকে কাগজ শিল্পে দেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পরও দাম না কমায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।
বইমেলা, পাঠ্য সহায়িকা, ক্যালেন্ডার, ডায়েরি তৈরির কাজ চলছে ছাপাখানায়। তবে তা অনেকটা ঢিমেতালে। বছর শুরুতে বাড়তি কাজের অবিরাম ব্যস্ততা নেই। বাংলাবাজার, ফকিরাপুল, আরামবাগে মলিন মুখ ছাপাখানা মালিক-শ্রমিকের। কাগজের দাম না কমায় এবারও বইমেলার কাজ এসেছে কম। ক্যালেন্ডার, ডায়েরির কাজ কমেছে ৪০ শতাংশ। সেই সাথে পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমে চাহিদা কমায় নোট-গাইড ছাপানোর কাজও কমেছে।
ছাপাখানার শ্রমিকরা বলেন, ‘এবার বইমেলার কাজ তেমন হয়নি। আগে কাজের চাপে বাড়িতে যেতে পারতাম না। এছাড়া নতুন বছরের ওয়াল ক্যালেন্ডারের কাজও কমেছে। কাজ নেই বললেই চলে।’
এদিকে প্রকাশকরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার দেরিতে প্রস্তুতি শুরু করলেও মেলার বই অনেকটাই প্রস্তুত। তবে কাগজের বাড়তি বাজারে এবারও বইয়ের দাম বাড়বে।
জ্ঞানকোষ প্রকাশনীর প্রকাশক শহীদ হাসান বলেন, ‘কাগজের পাশাপাশি বাইন্ডিংয়ের দাম বাড়ছে। আমাদের সব কাজেই ব্যয় বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার বইয়ের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়বে।’
এদিকে কাগজের দাম বাড়লেও সরবরাহ ঘাটতি নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিন সকাল গড়াতেই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ঠেলা গাড়িতে কাগজের পাইকারি বাজার নয়াবাজারে শত শত টন কাগজ আসে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি মাসে কাগজের চাহিদা প্রায় ৭৫ হাজার টন। এর মধ্যে অধিকাংশই প্রিন্টিং রাইটিং কাগজ। আর ৪০টির বেশি ছোট-বড় মিলে ১১ ধরনের কাগজ উৎপাদন হয়। এই শিল্পে বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠীগুলোর বড় বিনিয়োগ রয়েছে। তবে প্রিন্টিং রাইটিং কাগজে চাহিদার পুরোটা অভ্যন্তরীণ মিলাররা সরবারহ করলেও উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম বেশি।
ছাপাখানার মালিকরা বলেন, নতুন বছরেও কাগজের দাম কমেনি। আগে কাগজের দাম এতোবেশি ছিল না। এখন দেশীয় কাগজের দামটা বেশি।
আমদানি ব্যয় বাড়ায় আমদানি কাগজের বাজারও বাড়তি। প্রতি টনে খরচ দাঁড়ায় এক লাখ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার। আর দেশে উৎপাদিত প্রতি টন কাগজ এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সুমন বলেন, বিশ্ববাজারে দাম না বাড়লেও ৪৮ থেকে ৬১ শতাংশ উচ্চশুল্ক ও ডলার সংকটে কাগজ আমদানির খরচ বাড়ছে।
গার্মেন্টস পণ্য হিসেবে কাগজ আমদানিতে সরকারি শুল্ক সুবিধা ও প্রচুর কাগজ বন্ডের মাধ্যমে দেশে আসলেও বাজারে দামের ক্ষেত্রে তার কোন প্রভাব নেই।