'সাবিত্রী' একজন চা শ্রমিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। স্বাধীন দেশে যখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, তখন সাক্ষী হতে গিয়ে সাবিত্রী ও তাঁর যুদ্ধশিশু মঙ্গলকে টিকে থাকার জন্য প্রতিটি মুহূর্ত লড়তে হয়েছে। সেরকমই একটি গল্প সাবিত্রী। যার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নার্গিস।
'সাবিত্রী' চরিত্রের অভিনেত্রী নার্গিস বলেন, 'বীরঙ্গনার চরিত্র পেলে আমি ছাড়তে চাই না। কারণ বীরঙ্গনার মতো কেউ হতে পারে না। অনেকেই বীরঙ্গনাকে অন্য চোখে দেখে। কিন্তু আমি ওদেরকে অনেক শ্রদ্ধা করি। এটা অত্যাধিক ভালো একটা গল্প, যার জন্য করতে রাজি হয়েছি। আর পরিচালক খুবই পরিশ্রমী এবং উনি কাজ আদায় করে নিতে পারেন।'
এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে সাবিত্রী সিনেমার গল্প। একাত্তর ও বর্তমান সময়ের মিশেলে সিনেমাটির গল্প লিখেছেন নন্দিত সাংবাদিক ও গল্পকার তুষার আবদুল্লাহ।
'সাবিত্রী'র লেখক তুষার আবদুল্লাহ এখন টেলিভিশনকে বলেন, 'আমরা যাদেরকে নিয়ে সাবিত্রী তৈরি করতে চেয়েছিলাম সেটা হয়তো হয়নি। শুধু সাবিত্রী নয়, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে ছবিগুলো হয় সেখানে আমরা একাত্তরের আবহাওয়ায় ফিরে যেতে পারি না। আর আমরা যারা ছবি তৈরি করি তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা বা চর্চার মাধ্যমে ঐ দিনগুলোতে (একাত্তর) ফিরে যাওয়ার যে বিষয়টা, সেটা আমরা করি না। যেকারণে আমাদের শিল্প নির্দেশনায় ত্রুটি থাকে। সংলাপ ঠিক ছিলো কিন্তু ঐ ভাষায় রুপান্তর করার ব্যাপারে কিছুটা ঘাটতি ছিলো। ছবিটা যেহেতু হয়েছে, যখন স্বচ্ছলতা আসবে তখন পুনরায় নির্মাণ করা যেতেও পারে।'
সিনেমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিলো অনেক আগে তবে কোভিডের কারণে কাজ পিছিয়ে যায়। এছাড়া সিনেমার কাজ করতে গিয়ে অর্থ সংকটে পড়তে হয়েছিলো নির্মাতাকে।
নির্মাতা পান্থ প্রসাদ বলেন, 'সরকার আমাকে যে অনুদান দিয়েছিলো সেটা দিয়ে আসলে ছবির অর্ধেকও হয় না। আর্থিক সমস্যার কারণে সময় লেগে যায়। অনুদানের সংখ্যা কমিয়ে যদি পর্যাপ্ত অর্থ দেয় তাহলে নির্মাতাদের সার্বিকভাবে ভালো করে নির্মাণ করার সুযোগ থাকে।'
'সাবিত্রী' সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে রোকেয়া প্রাচী, অনন্ত হীরা, বৈশাখী ঘোষ, নার্গিস, সৈকত সিদ্দিকী, শাহরিয়ার বকুল, বৈদ্যনাথ সাহা, শ্যামল, আরতীসহ অনেকে অভিনয় করেছেন।
অভিনেতা সৈকত সিদ্দিকী বলেন, 'এ ছবিটির জন্য আমি প্রায় দুইবছর চুল-দাড়ি কাটিনি। দাদা অনেক সংগ্রাম করে ছবিটি মুক্তি দিয়েছে। এরআগেও আমার কিছু ছবি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু 'সাবিত্রী' আমার কাছে আলাদা। আমার মনে হয় এটা সেরা ছবি হবে।'
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন নারীর ত্যাগ এবং একুশ শতকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রেক্ষাপটে এক যুদ্ধসন্তান ও তাঁর মায়ের টিকে থাকার সংগ্রামই এই সিনেমার গল্প। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২২তম আসরে এই সিনেমার প্রিমিয়ার হলো ২৪ জানুয়ারি। জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারির অডিটরিয়ামে ছবিটি দেখতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল দর্শক।
সাবিত্রী দেখতে আসা এক দর্শক বলেন, 'এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ছবি। সিনেমায় আমি গভীরতা খুঁজে পেয়েছি। কাহিনীর সারল্যটা আমার ভালো লেগেছে।'
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক সিনেমা থাকলেও নারীকেন্দ্রিক সিনেমা খুব বেশি নেই বললেই চলে। তাই এমন সিনেমা আরও হওয়া উচিত বলে মনে করেন সিনেপ্রেমীরা।