গাজা উপত্যকায় গত তিন মাস ধরে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতাকে কেন্দ্র করে হিজবুল্লাহ-ইসরাইলের পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ আর লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতিদের হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। বিশ্বে বাণিজ্যেও এর প্রভাব পড়ছে। তার উপর হুতিদের দখলে থাকা ইয়েমেনের বিভিন্ন শহর-বন্দরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলা উত্তেজনার পারদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই হুতি গোষ্ঠীকে ফের বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিলো যুক্তরাষ্ট্র। যা ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। বৈশ্বিক পরিসরে হুতিদের প্রবেশাধিকার আরও সীমিত করা এবং তাদের কাজের জবাবদিহি করতে এই সিদ্ধান্ত সহযোগিতা করবে বলে দাবি ওয়াশিংটনের। তবে হুতিরা যদি তাদের আক্রমণ বন্ধ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে তা পুনর্মূল্যায়ন করবে বলেও হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, 'ইয়েমেনে মানবিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দাতা। যার কারণে আমরা সেখানকার বেসামরিকদের ক্ষতি কমাতে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছি। একইসঙ্গে বাণিজ্যিক জাহাজে তাদের আক্রমণ বন্ধের জন্য স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছি। তা না হলে প্রয়োজনে আরও কঠিন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকব।'
হুতিদের ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্য করে বুধবারও ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিলো বলে দাবি করা হচ্ছে। এতে ক্ষেপে গিয়ে লোহিত সাগর দিয়ে চলাচল করা ইসরাইল ও তাদের মিত্রদের জাহাজে আক্রমণের মাত্রা বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান সমর্থিত হুতিরা। এই অবস্থায় ওয়াশিংটন সব ধরনের মার্কিন জাহাজকে লোহিত সাগর এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছে।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলা করছে বলে মন্তব্য করেছে হুতি গোষ্ঠী। এমনকি নিরীহ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তাদের অবস্থান থেকে কিছুতেই পিছপা হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা।
হুতি সদস্য আবদুল রহমান আল-আহনুমি বলেন, 'সন্ত্রাসবাদ তালিকায় হুতিদের নাম লেখার মধ্য দিয়ে গাজায় ইহুদিদের আগ্রাসনকে আবারও সমর্থন দিলো যুক্তরাষ্ট্র। এসব করে ইয়েমেনকে তার অবস্থান থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি এটি ইয়েমেনকে ব্ল্যাকমেল করারও একটি অংশ।'
এর আগে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হুতিদের কালো তালিকাভুক্ত করে। এরপর জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর গোষ্ঠীটির সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেয়া হয়। তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, শেষ মুহূর্তে এসে আগের প্রশাসন হুতিদের সন্ত্রাসী তকমা দেয়ায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ মানবিক বিবেচনায় তা তুলে নেয়া হলো।