নির্বাচনী ইশতেহার বা প্রতিশ্রুতিকে বলা যেতে পারে দেশের সমৃদ্ধির ভবিষ্যত বাণী। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের অবকাঠামো ব্যবহার করে কোন লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়, কীভাবে পাবলিক পলিসি বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা হবে, ৫ বছরে কোনটি এগিয়ে থাকবে তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ইচ্ছা আর আকাঙ্ক্ষার ওপর।
রাজনৈতিক দলের এ প্রতিশ্রুতি বা গ্যারান্টির ওপর ভিত্তি করে নিজেদের সম্মতি বা অসম্মতি জানান ভোটাররা।
বরাবরই রাজনৈতিক ইশতেহারে দেশ, জাতি, সমাজ গঠন ও খাত ভিত্তিক লক্ষ্য , সুশাসন নিশ্চিত, অন্যায় ও দুর্নীতি রোধে অবস্থান পরিস্কার থাকে। তার সাথে গুরুত্ব পায় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও গতিশীলতা।
৭০ এর নির্বাচনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের পর নাগরিক মার্যাদা ও অর্থনীতিতে সম-অংশিদারিত্বের অধিকারের দাবি রাখে। যার ওপর নির্ভর করে স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষি ও শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয় বিনিময়, বিনিয়োগ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা।
এরপর নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, শ্রেণী বৈষম্য নিরসন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, জলবায়ু প্রতিরক্ষা অর্থনীতি, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার রোডম্যাপ দেয় রাজনৈতিক দলগুলো।
সমাজ আর রাষ্ট্রের অন্দরমহল ছাড়িয়ে ইশতেহারেই উঠে আসে প্রবাসী ও শিল্প উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বিনিময় সম্পর্ক ও কুটকৌশল, অর্থনীতি অঞ্চলে অংশীদারিত্ব রাখা, সুনীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ রেমিট্যান্স ও কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয়।
যার ওপর নির্ভর করে প্রতিনিয়ত গবেষণা ও পরিকল্পনার বিষয় হচ্ছে প্রকৃতি-পর্যটন, এসএমই, অনলাইন ব্যবসা বানিজ্য, ফ্রিল্যান্সিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ডিজিটাল লেনদেনের মতো জীবন গতিশীল রাখার নানা খাত।
সারা বিশ্বের লক্ষ্যমাত্রায় যত উদ্যোগ, সেখানে ছেদ ফেলে কোভিডের মতো মহামারি। আর উঠে দাঁড়াতে গিয়েও ভূ-রাজনৈতিক যুদ্ধে হোঁচট খেয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। সেখানে টাকার মূল্যের সাথে সীমিত হয়ে আসে দেশের বিনিয়োগ ও বিনিময়। মূল্যস্ফীতি উঠে আসে প্রাধান্যের তালিকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, 'আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে আমাদের ওপর চাপ পড়েছে। কিন্তু আমাদের দেশীয় অর্থনীতি শক্তিশালী বলে এ চাপগুলো আমরা সহ্য করতে পারছি। আমাদের অর্থনীতির যে জায়গায় চিন্তা আছে তা পরিবর্তন করতে হলে বড় কিছু চিন্তা করতে হবে। নির্বাচনের পর যারা ক্ষমতায় আসবে তারা সে সংস্কারে হাত দেবেন।
শ্রমশক্তির জরিপ বলছে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে কমে দাঁড়ায় ৭০ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর মোট বেকার জনগোষ্ঠী ২ দশমিক ৫০শতাংশ, যারা ৭ দিনে ১ ঘণ্টার কাজ পাননি।
১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর্মসংস্থান ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সাথে মধ্যম মেয়াদে অর্থনীতির ধাক্কা সামলে ধারাবাহিকতায় পৌঁছানো নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবীদরা জানান, নতুন সরকারকে শুরুতেই আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে। যা পরবর্তী ৫ বছরের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতাকে শিখরে পৌছাবে।





