গ্রাহকের সমস্যা সমাধান করে কল সেন্টার। মূলত নব্বইয়ের দশকে এই উপমহাদেশে কল সেন্টারের ধারণা শুরু হলেও একুশ শতকে বাংলাদেশে শুরু হয় এ সেবা। গ্রাহকদের মাঝে সহজে সেবা পৌঁছে দিতে মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর হাত ধরে দেশে শুরু হয় কল সেন্টারের সেবা।
একটি কল সেন্টার এমএফএস কোম্পানি, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ, সরকারি নানাবিধ সেবা দিয়ে থাকে। প্রায় ১ হাজার ২শ' এর বেশি কর্মীর চব্বিশ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা পায় গ্রাহকরা। মূলত এখানে যারা কাজ করেন তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী, সুবিধামত একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করা যায় বলে তাদের আগ্রহ বেশি।
কয়েকজন কর্মী বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ করতে পারি, সেজন্য আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এতে আমাদের কমিউনিকেশন দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। অনেকে রেগে কথা বলেন, অনেক ধৈর্য্য নিয়ে কথা বলতে হয় তাদের সাথে। তাদের সমস্যা খুঁজে বের করে তার সমস্যা সমাধান করতে হয়।
কর্মীদের দিনে ৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। শুরুটা হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। দিনের তিন শিফটেই কাজ করার সুযোগ আছে তাদের।
কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিনিয়তই তাদের নতুন কর্মীর উপর ভরসা করতে হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন কলের মাধ্যমে সেবা নিতে চায়। সে তুলনায় দক্ষ কর্মী পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নিজেদেরই প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হচ্ছে।
ডিজিকন ম্যানেজার শোহম ঘোষ জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি যারা নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে চায় তারা আমাদের এখানে আসলে প্রশিক্ষণ দেই। এরমধ্যে কম্পিউটার স্কিল বাড়ানো, সুন্দরভাবে কথা বলা প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য।
অন্যদেশের তুলনায় বাংলাদেশে কল সেন্টারের পরিসর বাড়লেও দুর্বল যোগাযোগ দক্ষতার কারণে দিন দিন কমছে এ সেবার বিস্তার। সঙ্গে বেতনকাঠামো ও বিনিয়োগ কম থাকায় এ খাতটি অগ্রসর হচ্ছে কম।
কিন্তু এক সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয় এই পেশা কল সেন্টারে কেন লোকবল পাওয়া যাচ্ছে না? কেন জৌলুস হারাচ্ছে এ খাতটি?
এক কল সেন্টারের সাবেক কর্মী জানান, ২০১৬ থেকে এর অগ্রগতি কম দেখে ছেড়ে দিয়েছি। কল সেন্টার সিস্টেম এখনও সরাসরি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলো থেকে চালানো হয় না। এখন আগের মতো সুবিধাও নেই।
কল সেন্টারের পরিবর্তে এখন প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রাক্ট সেন্টার নামেই বেশি পরিচিত। দেশে এমন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩শ'। তারমধ্যে হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া উন্নত সেবা দিতে পারে না অধিকাংশরা। প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাক্কোর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ সিমাবদ্ধতা স্বীকার করে জানান, আগামী দিনে এর পরিসর বাড়াতে কাজ করছেন তারা।
শুধু দেশি প্রতিষ্ঠানই নয়, বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বড় অংক ডলার আয় করা সম্ভব। দক্ষতা বাড়ানো গেলে এ খাতে বাংলাদেশের আধিপত্য বাড়ানোর সুযোগ আছে বলে মত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের। বেসিস সাবেক সভাপতি আলমাস কবির জানান, আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি, সেজন্য আমাদের এ খাতে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। এখানে কম সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব। এরজন্য দেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।