একের পর এক হামলায় প্রতিনিয়ত গাজা উপত্যকাকে কাঁপিয়ে তুলছে ইসরাইলি বাহিনী। দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের তালিকা। হামাসের গোপন সুড়ঙ্গ থাকার নাম করে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে হাসপাতালগুলোকেও।
এ অবস্থায় গাজার বেশিরভাগ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম এখন বন্ধ। এমনকি জ্বালানি ও ওষুধ সংকটে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে ভূখণ্ডটির চিকিৎসা ব্যবস্থা। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত এবং আগ্রাসী হামলায় আহত রোগীদের চিকিৎসা দেয়াটাও দুরূহ হয়ে পড়ছে।
ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই কারা মানুষের প্রাণ রক্ষার আহাজারিতে ভারী হয়ে আসছে গাজার আবহ। তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে শত শত ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা সেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ গাজার ক্যান্সার রোগীদের একমাত্র সেবাকেন্দ্র ছিলো এটি।
গাজার এক বাসিন্দা জানান, 'আমার ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। কেমোথেরাপি বা ব্যথানাশক কোনো ওষুধ নেই। তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালকে লক্ষ্যবস্তু করার পর থেকে আমার মতো আরো অনেক ক্যান্সার রোগীর স্বজনদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।'
আল-সালাম এবং শুহাদা আল-আকসা হাসপাতালে বেশ কয়েকজন ক্যান্সার রোগীকে স্থানান্তর করে জীবন রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এরমধ্যে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে ৪জন ক্যান্সার রোগীর।
তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল পরিচালক ডা. সোভি স্কিক বলেন, 'গাজার চিকিৎসা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান-দয়া করে আপনারা এগিয়ে আসুন এবং গাজাকে বাঁচান। গাজার নিরীহ জনগণ, আহত এবং আমাদের ক্যান্সার রোগীদের হত্যা বন্ধ করতে আপনারা কিছু একটা করুন।'
এমন মানবিক বিপর্যয়ে সারা দিয়ে এগিয়ে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। পর্যাপ্ত না হলেও চিকিৎসা নিশ্চিতে বিশেষ ফ্লাইটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীদের। তবে সরাসরি গাজা থেকে তাদের নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। যেসব আহত রোগীদের রাফা সীমান্ত দিয়ে মিশরে নেয়া সম্ভব হয়েছে, শুধু তারাই আসছেন। এরইমধ্যে ক্যান্সার রোগীদের নিতে শুরু করেছে তুর্কিয়ে।
১ হাজার গাজাবাসীকে চিকিৎসা দেয়ার প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রথম ফ্লাইটে সুযোগ পেয়েছেন গুরুতর আহত এবং ক্যান্সার রোগীসহ ১৫ জন।
এমন সুযোগ পাওয়া এক গাজাবাসী গণমাধ্যমকে জানান , 'দিন দিন গাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এর ব্যাখ্যা করা কঠিন। আপনি যদি সেখানে থাকেন তাহলেই গাজাবাসীর কষ্টগুলো অনুভব করতে পারবেন। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ আমরা এখন সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। তবে আমাদের অনেক স্বজনরা এখনও রয়ে গেছেন। তাদের জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছুই করার নেই।'
পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা সেবা ও বাস্তুচ্যুতদের বাসস্থান নিশ্চিতে আরও বেশি এগিয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্য বিভাগ। আবুধাবি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি ডা. নুরা আল গাইথি বলেন, 'আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াচ্ছি। যাতে গাজাবাসীর বাসস্থান ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়। নিশ্চিত করতে চাই যে এই মহৎ প্রচেষ্টায় আমরা অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। ফিলিস্তিনিদের সমর্থন ও মানবিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচেষ্টা আরও বাড়ানো হবে।
এদিকে গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা ঘিরে এখনও তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এ অবস্থায় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গাজার সংকটকে জাতিসংঘ ও এর সদস্য দেশগুলোর জন্য 'অ্যাসিড টেস্ট' বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।