দু'সপ্তাহ থেকে সূর্যের প্রখরতা আর রূদ্ররূপে পুড়ছে রাজশাহী। বৃষ্টি, ঠান্ডা বাতাস বা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, কোন ধরনের শীতলতার খবর নেই এই জনপদে।
তীব্র তাপপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় গনগনে সূর্যে পুড়ছে রাজশাহীর ২১ হাজার হেক্টর আমের বাগান। যেখান থেকে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৬০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে। যার বাজারদর ১৮০০ কোটি টাকা। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এবছর শীত উপেক্ষা করে যতটুকু আমের মুকুল গুটি বেঁধেছিল, তীব্র খরায় চুপসে গিয়ে তার অনেকই ঝরে পড়ার উপক্রম। কৃষকরা বলছেন, আম বৈরিতাসহিষ্ণু ফল হলেও বাগানে মাটির আর্দ্রতা কমায় আম ধরে রাখতে পারছে না গাছ।
খরা থেকে ফল বাঁচাতে ২১ হাজার হেক্টর বাগানে সেচ, ভিটামিন স্প্রেসহ আমে যত্ন বাড়াচ্ছে কৃষক। তাতে বিঘায় বাড়তি খরচ হচ্ছে ৩ হাজার টাকা।
বাগানিরা বলেন, 'আম বড় হচ্ছে না আবার হলুদ হয়ে পড়ে যাচ্ছে। এ কারণে সেচ দিতে হচ্ছে। নয়তো আমের সৌন্দর্য হবে না। এবার তুলনামূলক আম কম হয়েছে। তাপমাত্রার কারণে ব্যাপক ক্ষতি। আম রাখা যাচ্ছে না।'
নাটোরজুড়ে ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি, বোম্বায়সহ অন্যান্য জাতের আমের বাগান আছে ৫ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে। তবে সেই আশায় বাঁধ সেধেছে গরমের তীব্রতা। ঝরে পড়েছে অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমের মুকুল। সেইসাথে বেড়েছে পোকার আক্রমণ। তাই পরিচর্যায় যত্ন বাড়িয়েছেন বাগান মালিকরা।
এ অবস্থায় বাগানে হালকা সেচের পাশাপাশি আমের গুটি ঝরা রোধে পরিমিত মাত্রায় কীটনাশক স্পে করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ। বলেন, 'সেচ প্রদান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে রসটা যাতে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে না যায়। যেসব এলাকায় সেচের ব্যবস্থা নাই তাদের স্প্রে করতে হবে।'
মেহেরপুরে বেশ কিছুদিন ধরে নেই বৃষ্টিপাত। তাই ক্ষতির মুখে লিচু চাষিরা।
মেহেরপুরের প্রায় ৭১৫ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগানে মুকুল হয়। যা থেকে উৎপাদনের আশা ৬ হাজার ১১০ টন লিচু। যার বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকা। এখানকার আটি লিচু, মুম্বাই ও চায়না লিচু সবচেয়ে সুস্বাদু। চৈত্র মাসের শেষ দিকে আসতে শুরু করে গুটি। তবে গুটি হওয়ার এ সময় অব্যাহত তাপপ্রবাহ আর অনাবৃষ্টিতে পুড়ে যাচ্ছে গাছের মুকুল, ঝরে যাচ্ছে নতুন গুটি। এ অবস্থায় লিচু বাগানে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচ দিচ্ছেন লিচু চাষিরা।
কৃষকরা বলেন, কয়েকদিন পর পর সেচ দিচ্ছি তারপরেও লিচু ঝরে যাচ্ছে। রোজ স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। গুটি ঝরে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের বৃষ্টি দরকার।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, 'গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ ফল কম হবে। তবে যেসব গাছে ফল এসেছে আমরা চেষ্টা করবো সেগুলো ধরে রাখার।'
গেল বছর শুধুমাত্র রাজশাহীতে আম থেকে বাণিজ্য হয় ১৫০০ কোটি টাকার। আর নাটোরে বাণিজ্য হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার। আর মেহেরপুর লিচু থেকে আয় হয় ৫০ কোটি টাকা।