সহযোগীদের নিয়ে মাছ শিকার করছেন জেলে রুবেল বেপারি । ছবি: এখন টিভি
টাঙ্গাইলের সারুটিয়া গ্রামের জেলে রুবেল বেপারি প্রায় ২০ বছর যাবত যমুনা ও ধলেশ্বরী নদী থেকে জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন। কয়েক বছর আগেও এক টানে ১০/১২ কেজি মাছ পেলেও চলতি ভরা মৌসুমে মাছ পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ২ কেজি।
রুবেল বলেন, 'কারেন্ট জাল দিয়ে ডিম মাছ মেরে শেষ করছে। এখন আমরা মাছ পাই না। পানির জন্য আমরা মাছ আরও কম পাইতেছি।'
যমুনা নদীর মাছের জন্য বিখ্যাত ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী বাজার। নদীতে সারা রাত মাছ ধরে এ বাজারে ভোরে নৌকাযোগে দেশিয় মাছ নিয়ে আসেন দুই শতাধিক জেলে। কয়েক বছর আগে প্রতিদিন ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে ৫০ মণ মাছ উঠলেও এখন মাছ উঠছে সর্বোচ্চ ১০ মণ। আড়তদাররা বলছেন, 'নানা কারনে নদী থেকে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত মাছ পাওয়ায় বাজারটি তার জৌলুস হারাতে বসেছে।'
নদীতে মাছ না পাওয়ায় জৌলুস হারাচ্ছে টাঙ্গাইলের গোবিন্দাসী বাজার। ছবি: এখন টিভি
জেলেরা বলছেন, 'বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে ডিমওয়ালা মা মাছ, পোনা মাছ নিধন এবং নিষিদ্ধ চায়না দোয়ারি, কারেন্ট জাল ও হিট ব্যবহার করে নানা অবৈধ পন্থায় মাছ শিকারের কারনে নদীসহ বিভিন্ন জলাশয় থেকে দেশিয় প্রজাতির মাছ কমে যাচ্ছে।'
অনেকে আবার অন্যকে দেখে চায়না জাল কিনে মাছ ধরছেন। এদিকে, টাঙ্গাইলের অন্যতম বড় মাছের আড়ত শহরের পার্ক বাজার। দেশিয় মাছ কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ভোরে এ বাজারের আসা চাহিদার ২০ থেকে ২৫ ট্রাক মাছই চাষের। যার ৭৫ শতাংশ ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসে।
টাঙ্গাইল শহর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ফিরোজ বেপারী বলেন, 'বিভিন্ন জায়গায় স্লুইস গেট করার কারণে পানিগুলো বিল হাওড়ে যেতে পারে না। ফলে মাছ উৎপাদন হয় না। আর বর্তমানে যে চায়না জাল বের হয়েছে সেটা অনেক ক্ষতিকর।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'ইতিমধ্যে দেশের প্রায় আড়াইশ' প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদী ও মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, কৃষি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার এবং বিভিন্ন কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলায় দেশিয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। এছাড়াও নদীতে স্লুইসগেট নির্মাণ ও নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় মাছের বংশ বিস্তার ব্যাহত হচ্ছে।'
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এসএম সাইফুল্লাহ বলেন, 'কালের চক্রে বিভিন্ন কারণে প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট কারণে অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে ফেলেছি। অনেক প্রজাতির মাছ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।'
জেলায় বছরে প্রায় ৮৮ হাজার টন মাছের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয় প্রায় ৬৫ হাজার টন। মাছের উৎপাদন বাড়াতে চাষীদের প্রশিক্ষনের পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'ঘাটতি পোষানোর জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকি। বিশেষ করে পুকুরে মাছ উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি যাতে চাষীরা গ্রহণ করে সেই বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেই। মাটি এবং পানি পরীক্ষা করে থাকি।'
জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশিয় মাছের সুদিন ফিরে আসবে এমনটি প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।