ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের চর আনন্দ গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এক একর জমিতে আবাদ করেছেন আলুর। কিন্তু সার, বীজ, শ্রমিকের খরচ বৃদ্ধি ও ফসলের রোগ বালাইয়ে শঙ্কিত তিনি।
এ আলু চাষী বলেন, 'একজন লেবারের আগে মজুরি ছিল ৪০০ টাকা এখন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ৬০০ টাকা বেতন আর ১০০ টাকা খরচ।'
আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি রোগবালাই কম হওয়ায় কয়েক বছর আগেও জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হতো। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে অসময়ে বৃষ্টিপাতসহ বেড়েছে ফসলহানির নানা উপলক্ষ্য।
কৃষি অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে জেলায় ধারাবাহিকভাবে আলুর আবাদ ও উৎপাদন কমেছে। যেখানে ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার টন। সেখানে চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৯ হাজার টন।
একের পর এক দুর্যোগ এবং উৎপাদন উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা চাষিরা। এবারও লোকসান হলে কমবে কৃষকের সংখ্যা। তাই নির্ভরতা প্রকৃতির সহায়তার ওপর।
কৃষকেরা বলেন, 'এই মূল্যে বাজার থাকলে আমরা আলু চাষ করতে পারবো না।'
আরেকজন চাষি বলেন, 'লস হতে হতে আমি দুই বছর আলু চাষ করছি না। ধান চাষ করছি।'
আরেকজন বলেন, '৫ শতাংশ জমির আলু করতে ৫০ হাজার টাকা লাগে। আর ৫ শতাংশ জমিতে ইরি ধান করতে ৩০ হাজার টাকা লাগে।'
আলু আবাদ এবং উৎপাদন কমলেও কৃষকরা গম, সরিষাসহ অন্যান্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন বলে দাবি কৃষি কর্মকর্তাদের।
ভোলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবিএম মোস্তফা কামাল বলেন, 'বীজের প্রাপ্যতা কম ছিল এবং বীজের দাম বেশি। পাশাপাশি জমির জো অবস্থা আসতে দেরি হওয়ায় অনেক কৃষক জমি ভেজা থাকায় আলু চাষ সঠিক সময়ে করতে পারেনি।'
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসান ওয়ারেসুল কবীর বলেন, 'আমাদের আলুর আবাদ কিছুটা কমলেও আমরা কৃষকদের যে প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ বা কারিগরি সহায়তা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি সেক্ষেত্রে পাশাপাশি রিপ্লেসমেন্ট ফসল হিসেবে সরিষা এবং গমের আবাদ করছে।’
আলুর দুর্যোগ সহনীয় জাত রোপণ এবং উৎপাদন বাড়াতে কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতা বাড়ানোর দাবি অভিজ্ঞ কৃষকদের। এতে কম দামে স্থানীয় আলু বাজারে সরবরাহ সম্ভব হবে বলে দাবি তাদের।