৩৭ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদে এবার একেবারেই নতুন মুখ ১৪ জন। বাকিরা একাধিকার ছিলেন মন্ত্রীর দায়িত্বে। সে হিসেবে অভিজ্ঞতার ঘাটতি নেই নতুন কেবিনেটে। এছাড়া কর্মদক্ষতা ও নিজ পেশায় সফল এমন ব্যক্তিরাও স্থান পেয়েছেন মন্ত্রিসভায়। বিবেচনায় ছিল সাংগঠনিক অবদানও। সবমিলিয়ে পেশাদারিত্ব ও নতুনত্বের মিশেলে গঠিত হয়েছে এবারের মন্ত্রিসভা।
নোয়াখালি-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে প্রথম ও ২০০৯ সাল থেকে টানা চতুর্থবার রাষ্ট্রক্ষমতার সুযোগ পায়। এই পাঁচবারই শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় ছিলেন ওবায়দুল কাদের। এই সুযোগ আর কারও হয়নি।
আওয়ামী লীগের দুজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও ডা. দীপু মনি টানা চতুর্থবারের সরকারের তিন দফায় মন্ত্রীপরিষদে আছেন। এবারও থাকছেন পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে। টানা তৃতীয় বারের মতো আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও থাকলেন অপরিবর্তিত। আইন আদালত পাড়ার অনেক ইস্যুতেই গণমাধ্যমে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
দ্বগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবায় পেশাগত সুনাম অর্জন এবং বার্ন ও সার্জারি বিষয়ে চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়াতে অবদান রাখায় এবারের মন্ত্রীসভায় ডা. সামন্ত লাল সেনকে বেছে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সফলতার কারণেই এবারও টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে স্থপিত ইয়াফেস ওসমানকেই বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে প্রথমবার মন্ত্রী হচ্ছেন আবদুর রহমান, জিল্লুল হাকিম ও উপাধ্যাক্ষ আবদুস শহীদ। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে বিসিবিকে নেতৃত্ব দেয়া নাজমুল হাসান পাপনও পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই এসেছেন মন্ত্রিপরিষদে। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় প্রয়াত নেত্রী আইভি রহমানের সন্তান। মাঝে বিরতি দিয়ে দ্বিতীয়বার মন্ত্রিপরিষদে জায়গা পেলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
ব্যতিক্রমী চমক হচ্ছেন ঢাকা-১২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বাধীনতার পর তিনি প্রথম কোন রাজনীতিবিদ যিনি টানা তিনবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। পুরো দায়িত্ব পালন কালে কোনো বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ নেই তার বিরুদ্ধে। সে কারণে এবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন তিনি।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব পালন করার পর অনেক দিনই সরকারের বড় কোনো পদে ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। সেবার পেয়েছিলেন নৌপরিবহন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় দাতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি পেয়েছেন পূর্ণমন্ত্রী হয়ে।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ফরহাদ হোসেন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নতুন মন্ত্রিপরিষদে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়বার মন্ত্রিসভায় আবারও ফিরে এলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ফারুক খান, দিনাজপুরের আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সাধন চন্দ্র মজুমদার, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, তাজুল ইসলাম ও নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
পূর্ণ মন্ত্রীর আরও নতুন মুখ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও ময়মনসিংহের আবদুস সালাম।
এদিকে, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে গাজীপুর থেকে দুজন নারী সংসদ সদস্যকে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে সিমিন হোসেন রিমি বাংলাদের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তাজউদ্দিনের কন্যা। রুমানা আলীও নতুন মুখ। তবে তার পিতা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা অ্যাডভোকেট রহমত আলী।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার মন্ত্রিসভায় এসেছেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত, খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, টাঙ্গাইলের আহসানুল ইসলাম টিটু, সিলেটের শফিকুর রহমান, পটুয়াখালির মহিবুর রহমান। এছাড়া, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জুনাইদ আহমেদ পলক, নসরুল হামিদকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বহাল রাখা হয়েছে।