শীত মৌসুমে পর্যটকদের ঢল নামে কুয়াকাটায়। সাগরের সৌন্দর্য, ঢেউ, বালিয়াড়ি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখতে সাগর পাড়ে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।
আড়াই দশক আগে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে কুয়াকাটার পথে যেতে পাড়ি দিতে হতো ৯ থেকে ১০ টি ফেরি। গড়ে ১ ঘণ্টা করে, শুধু ফেরিতেই সময় ব্যয় হতো ১০ ঘণ্টারও বেশি। পদ্মা সেতু চালুর পর ফেরিবিহীন যাতায়াত শুরু হওয়ায় এখন রাজধানী থেকে কুয়াকাটা পৌঁছাতে সময় লাগে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা। সময় কম লাগায় গত বছর কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল নেমেছিলো। কুয়াকাটা কেন এতো পছন্দের তা জানালেন পর্যটকরা।
তারা বলেন, সারাবছর বাচ্চাদের পড়ালেখার পর, বছরের শেষে ঘুরতে নিয়ে এসেছি। লাল কাঁকড়া, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য মূলত কুয়াকাটা আসা।
১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়াকাটায় প্রথম পর্যটন মোটেল উদ্বোধন করেন। সে সময়ে কুয়াকাটায় ছিল হাতে গোনা কয়েকটি হোটেল। গত ২৫ বছরে এখানে হোটেলের সংখ্যা বেড়েছে। এখন প্রায় ২০০ টি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে ।
এসব হোটেলে রয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোকের আবাসনের ব্যবস্থা। গত বছর পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ বছরও আশার আলো দেখছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।
খান প্যালেস হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ফজলুল করিম ইমন বলেন, 'গতবছর পর্যটকের বেশি চাপ ছিল, অনেকে হোটেলে রুম পায়নি। যেদিন এসেছে সেদিনই চলে যেতে হয়েছে। তা লক্ষ্য করে আমরা চেষ্টা করছি কুয়াকাটায় রুম সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।'
একসময় নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যটকের উপস্থিতি বেশি থাকত। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানী থেকে যাতায়াতে সময় কম লাগায় এখন বছরজুড়ে কুয়াকাটায় পর্যটকের উপস্থিতি বেশি থাকে। আর এ কারণে আবাসন সংকট থাকে প্রায় ১২ মাসই। এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে হোটেল ব্যবসায়ীরা। কেউ হোটেলের রুম বাড়িয়েছেন। আবার নতুন ভবন নির্মাণ করেও হোটেল তৈরি করা হচ্ছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান রিফাত ফেরদৌস বলেন, 'পর্যটকদের থাকার ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আগের তুলনায় বাড়বে, এরফলে এ অঞ্চলে ব্যবসার প্রসার ত্বরান্বিত হবে।'
কেবল আবাসন সুবিধা নয়, কুয়াকাটায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতাও জোরদার করা হয়েছে।
বরিশাল অঞ্চল ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'পর্যটকরা যেন মনে করে কুয়াকাটা ভ্রমণের জন্য নিরাপদ জায়গা, তারা যেন এখানে আসে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।'
কুয়াকাটায় প্রথম সারির হোটেলগুলোর রুম ভাড়া ৯ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এমন হোটেলের সংখ্যা ৫ থেকে ৬ টি। দ্বিতীয় সারির হোটেল আছে ১৪ থেকে ১৫ টি। এগুলোর রুম ভাড়া ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বাকী হোটেল গুলোর রুম ভাড়া ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর হোটেলগুলোতে সময়ভেদে ও নিজস্ব নিয়ম অনুসারে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে।