১৯৮৭ সালের ২৪ জুন হোর্হে মেসি ও সেলিয়া কুচেত্তিনির ঘর আলো করে আসেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচেত্তিনি। পাঁচ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন যার কোচ ছিলেন তার বাবা হোর্হে। পরে রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন।
এখানেই মূলত তার বিস্ময়কর প্রতিভার প্রমাণ মিলতে শুরু করে। মেসি যোগ দেয়ার পরবর্তী চার বছরে একটি মাত্র খেলায় পরাজিত হয়েছিল নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ। ফলে মেসি পরিচিত হয়ে ওঠেন 'দ্য মেশিন অফ ৮৭' নামে। এই নামের পেছনের কারণটাও বেশ মজার। মেসির সতীর্থ সবার জন্মসাল ছিল ১৯৮৭।
মাত্র ১১ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ার পর মেসির পেশাদার ফুটবলার হওয়া স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসিকে ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও তহার চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে ৯০০ ডলার করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
তবে বিধাতা চাননি এই প্রতিভা ঝরে যাক। আর তাই, মেসির খেলায় মুগ্ধ হন বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ। তিনি এতোটাই উচ্ছ্বসিত ছিলেন যে, হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন। বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় বহন করতে রাজি হয়। আর এখান থেকে শুরু হয় ফুটবলের রাজপুত্রের নতুন জীবন।
২০০২ সাল থেকে বার্সার যুবদলে ক্যারিয়ার শুরু। পরের বছর যোগ দেন অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। এরপর বার্সা অনূর্ধ্ব-১৯, সি দল এবং বি দল হয়ে একই বছর মূল দলে অভিষেক হয় পোর্তোর বিপক্ষে।
জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট না হলে অনেকেই মেসির দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে দেশ এবং জাতীয় দলের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ তিনি কৈশোর থেকেই দিয়ে আসছেন। ২০০৪ সালে স্পেনের জাতীয় অনূর্ধ্ব ২০ দলে খেলার প্রস্তাব পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ, ম্যারাডোনার উত্তরসূরি হয়ে আকাশি নীল জার্সি গায়ে জড়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি।
আকারে-গড়নে ছোটখাটো। স্বভাবও ভীষণ চুপচাপ। কিন্তু বল পায়ে তিনি অন্য মানুষ। বাঁ পায়ের মোহনীয় জাদুতে বুঁদ হয়ে রাতের পর রাত বিনিদ্রায় কাটে লাখো কোটি ভক্তের। এরই মধ্যে ৮০০'রও বেশি গোল করেছেন। সহায়তা করেছেন প্রায় ৪০০ গোলে। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে প্রায় ১২০০ গোলে সরাসরি অবদান আছে তার।
ক্লাব ক্যারিয়ারের অধিকাংশই কাটিয়েছেন বার্সেলোনায়। স্প্যানিশ ক্লাবের হয়ে জিতেছেন ৩৪টি শিরোপা। এছাড়াও ফ্রান্সে গিয়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের হয়েও দুই মৌসুমেই লীগসহ তিনটি শিরোপা জিতেছেন।
বিশ্বের সেরা ফুটবলার হয়েছে রেকর্ড সাতবার। এছাড়া ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন একাধিকবার। ফিফা বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন রেকর্ড দুইবার, এছাড়া কোপা আমেরিকার টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফিও উঠেছে তার শোকেসে।
ফোর্বস সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মাঠ ও মাঠের বাইরের স্পন্সরসহ বর্তমানে মেসির বার্ষিক আয় ১৩০ মিলিয়ন ডলার। দুই যুগ পর ইউরোপ ছাড়ছেন মেসি। যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মিয়ামিতে। ফুটবলের জাদুকর এখন আলো ছড়াবেন সকারে। ক্লাবটির সঙ্গে মেসির চুক্তির বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সবমিলিয়ে তার আয় বেশ লোভনীয়ই হবে।
আর্জেন্টিনার হয়ে এখন পর্যন্ত ১৮৩ ম্যাচে ১০৮ গোল করে এরই মধ্যেই দেশটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি। ২০২১ কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ের পর ২০২২ এসে আরাধ্য বিশ্বকাপেও চুমু খেয়েছেন। ভক্তরা এটাকে তার ক্যারিয়ারের পূর্ণতা হিসেবে দেখে থাকেন।