২০২২ সালের সেমিফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোলে রিয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে থেকে ম্যানচেস্টার সিটিকে বিদায় করেছিল। দ্বিতীয় লেগে রদ্রিগোজোড়া গোল করেছিলেন। গত সপ্তাহে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগেও দুই গোল করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান।
রদ্রিগোর ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ ও স্ট্রাইকিং পার্টনার ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও ইংলিশ মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামই বেশীরভাগ সময় মাদ্রিদের ম্যাচে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। কিন্তু রদ্রিগো অনেকটাই আড়ালে থেকেই নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। গত দুই ম্যাচে তিন গোল করেছেন রদ্রিগো। বিশেষ করে মাদ্রিদের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।
প্রথম লেগে মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি রদ্রিগোকে আক্রমণভাগের বাম দিকে খেলিয়েছেন। এই পজিশনে তিনি মাঝে মাঝে খেলে থাকেন, অথচ ডান দিকে খেলতেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ১৪ মিনিটে গোল করে তিনি মাদ্রিদকে ২-১ গোলের লিড এনে দেন। তার শট ম্যানুয়েল আকাঞ্জির ডিফ্লেকটেড হয়ে সিটি গোলরক্ষক স্টিফান ওরতেগাকে পরাস্ত করে। কোচ যখন যেখানে প্রয়োজন মনে করে রদ্রিগোকে ব্যবহার করেন। আনচেলত্তির জন্য রদ্রিগোর বৈচিত্র্য একটি অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে উত্তেজনাকর ম্যাচ শেষে রদ্রিগো বলেছেন, 'সিটি আমাকে বামদিকে প্রত্যাশা করেনি। আজ আমরা তাদের জন্য ম্যাচটি কঠিন করে তুলেছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা কাজে লেগেছে। পরের ম্যাচে আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামবো। প্রতিযোগিতা এখন উন্মুক্ত হয়ে গেছে। যে দল কম ভুল করবে তারাই এগিয়ে যাবে।'
গত মৌসুমে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল পেপ গার্দিওলার দল। লস ব্লাঙ্কোসরা সেই ক্ষত পুষিয়ে এবার প্রতিশোধ নেবার সুযোগ পেয়েছে। এবার আরও বেশী শক্তিশালী হয়েই মাঠে নেমেছে মাদ্রিদ। ইতোমধ্যেই লা লিগায় আট পয়েন্টের ব্যবধানে শীর্ষে রয়েছে। বেলিংহামকে সাথে নিয়ে ভিনিসিয়াস ও রদ্রিগো মাদ্রিদের আক্রমণভাগে দারুণভাবে প্রমাণ করে চলেছে।
প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করতে রদ্রিগো প্রায় প্রতি ম্যাচেই সফল হয়েছেন। ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে আগামী কাউন্টার এ্যাটাক থেকে সিটিকে পিছনে ফেলতে চায় মাদ্রিদ। পুনরুজ্জীবিত দলটিতে এই একটি অস্ত্রই এখন তাদের সাফল্যের মূলমন্ত্র।
এবারের মৌসুমে সব মিলিয়ে নিজেকে খুব একটা এগিয়ে নিতে না পারলেও রদ্রিগোর ওপর সবসময়ই আস্থা রেখেছেন আনচেলত্তি। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১১ ম্যাচে কোনো গোল করতে পারেননি রদ্রিগো। কিন্তু এরপর আট ম্যাচে করেছেন আট গোল।
গত আসরের ক্ষত পুষিয়ে উঠতে এবার মাদ্রিদের সামনে জয়ের ভিন্ন কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু ২০২২ সালের সেমিফাইনালে ৯০ ও ৯১ মিনিটে রদ্রিগোর দুই গোল এখনও ভুলতে পারেনি সিটি সমর্থকরা। সিটি যখন প্রায় প্যারিসের ফাইনালের টিকেট কেটেই ফেলেছিল ঠিক ঐ সময় সবাইকে হতবাক করে রদ্রিগো জোড়া গোল করেন। করিম বেনজেমার পেনাল্টিতে ফাইনাল নিশ্চিত করা মাদ্রিদ শেষ পর্যন্ত রেকর্ড ১৪বারের মত শিরোপা জয় করার কৃতিত্ব দেখায়।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জয় করেছেন রদ্রিগো। গত এক দশকে একটি মাত্র প্রতিযোগিতায় মাদ্রিদ নিজেদের এগিয়ে নিতে পারেনি, সেটা হলো-কোপা ডেল রে। কিন্তু ২০২৩ সালে ওসাসুনার বিপক্ষে রদ্রিগোর জোড়া গোলে ২-১ গোলে জয়ী হয়ে সেই শিরোপাও ঘরে তুলে নেয় মাদ্রিদ। ২০১৪ সালের পর মাদ্রিদের এটাই ছিল প্রথম কোপা শিরোপা। ১৭ বছরের ইতিহাসে স্প্যানিশ কাপ ফাইনালে সবচেয়ে দ্রুততম গোলের রেকর্ড গড়েছেন রদ্রিগো।
গত মৌসুমে চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগেও রদ্রিগো জোড়া গোল করেছিলেন। এ সবই রদ্রিগোকে মাদ্রিদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে, যার উপর অনায়াসেই আস্থা রাখা যায়। এ কারণেই গ্রীষ্মে যদি শেষ পর্যন্ত পিএসজি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে ভেড়ানো যায় তবে টিম কম্বিনেশন কেমন হবে তা নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই ধরে নিয়েছে রদ্রিগো হয়তো তার মূল দলের জায়গা হারাতে যাচ্ছেন।