আজন্ম লালিত স্বপ্ন যখন হাতের মুঠোয় ধরা দেয়, তখন অনুভূতিরা কি সলাজ হাসি হয়ে ফিরে আসে? কিছুটা কি স্নায়ুচাপে ভুগতে হয়? ভারতীয় ক্রিকেটার সরফরাজ খান হয়তো এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন। অনীল কুম্বলের হাত থেকে যখন টেস্ট ক্যাপটা নিচ্ছিলেন, মনের ভেতর কি চলছিল তার কে জানে! বাবা নওশাদ খানের অশ্রুসজল চোখ অবশ্য অনুভূতি লুকাতে পারেনি মোটেও।
এই ক্যাপটা পেতে কম কাঠখড় পোহাতে হয়নি সরফরাজকে। জাতীয় দলে আসার আগেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখে ফেলেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন ভারতের অন্যতম চর্চিত ক্রিকেটার। বাবার হাত ধরে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় তার। মাত্র ১২ বছর বয়সেই আসেন আলোচনায়। আন্তঃস্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ৪৩৯ রান করে ভাঙেন বিরাট কোহলির রেকর্ড। তবে এরপরই তার বিরুদ্ধে বয়সচুরির অভিযোগ আনা হয়। যদিও ধোপে টেকেনি সে অভিযোগ।
১৬ বছর বয়সে ডাক পান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে সত্তরের বেশি গড়ে করেন ২১১ রান। তবে যুব বিশ্বকাপের পরের আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন ৩৫৫ রান করে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তাকে ৫০ লাখ রুপিতে কিনে নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। সরফরাজের নাম লেখা হয় আইপিএল ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটারের রেকর্ডে। সে সময় তিনি ড্রেসিংরুম শেয়ার করেন বিরাট কোহলি, এবিডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইলের মতো বিশ্ব তারকাদের সঙ্গে।
তবে এই সুখও বেশিদিন সয়নি সরফরাজের কপালে। তার কিছুটা স্থুলকায় শরীর নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন স্বয়ং বিরাট কোহলি। তবে বাবার পরামর্শে মুম্বাই ছেড়ে উত্তর প্রদেশে পাড়ি জমান সরফরাজ। ক্রিকেটীয় দক্ষতার পাশাপাশি কাজ করেন নিজের ফিটনেস নিয়েও। রঞ্জি ট্রফিতে ৯০০-র বেশি রান করে আবারও নজর কাড়েন সরফরাজ।
অবশেষে জাতীয় দলের দরজাটাও খুলে গেল তার জন্য। ঘরের মাঠে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের মাধ্যমে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে পা রাখলেন সরফরাজ। অভিষেকে জিমি অ্যান্ডারসন-মার্ক উডদের সপাটে ব্যাট চালিয়ে প্রথম ইনিংসেই তুলে নিলেন ফিফটি। তবে দুর্ভাগ্য রান আউটের কবলে না পড়লে ৬২ রানের ইনিংসটাকে হয়তো টেনে নিয়ে যেতেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারের দিকে।
প্রথম ইনিংসে হয়নি, তবে লম্বা রাস্তা সামনে পড়ে আছে সরফরাজের জন্য। ছোটবেলা থেকেই কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে দেড়শো কোটি মানুষের দেশে যিনি হয়ে উঠেছেন সেরা ১১ জনের একজন, তাকে থামানোর সাধ্য কার?