অবৈধ সংযোগে বেড়েই চলেছে গ্যাসের সিস্টেম লস

অর্থনীতি , পরিষেবা
বিশেষ প্রতিবেদন
0

গ্যাস সংকট আর লিকেজে ভরা পুরনো পাইপের কারণে ঠিকমতো মিলছে না গ্যাস। ইট-পাথরে চাপা পড়া লাইন সংস্কারে অপারগ তিতাস। অবৈধ সংযোগে বেড়েই চলেছে সিস্টেম লস। অস্বীকার করছেন না নিজেদের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টিও। এসব কারণেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রাহক সেবায় তিতাস ব্যর্থ বলে মত বিশেজ্ঞদের, তবে পাইপলাইন প্রতিস্থাপন অসম্ভব নয়।

পুরান ঢাকার নবাবপুরের এই বাড়ির গ্যাস সংযোগ নেয়া হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। পাইপে নেই গ্যাসের ছিটেফোটাও, ভেতরে পানির খলখল শব্দ। বাড়ির মালিক নিজেই সংযোগ খুলে দেখাচ্ছিলেন তার প্রমাণ।

নবাবপুর এলাকার প্রতিটি বাড়ির গ্যাস সংযোগই ১৯৮০ সালের আগে নেয়া। সংকটের কারণে অন্যদিকে যখন গ্যাসের চাপ কমে, এ এলাকায় তখন থাকে না একেবারেই। মাঝে মাঝে গ্যাসের লাইনে পানিরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

তবে, সম্প্রতি লিকেজে ভরা এক ইঞ্চি পাইপ সংস্কারের দাবি নিয়ে তিতাসের কাছে গেলে, যথাযথ উদ্যোগের আশ্বাস পাননি বলে অভিযোগও রাজধানীবাসীর।

তিতাসও বলছে, পাইপে লিকেজ ও অবৈধ সংযোগ, এ দুই কারণে কমছে না সিস্টেম লস, যার হার ৮ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে, কোথাও পাইপের বয়স হয়ে গেছে ৩০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত। রাজধানীর ইট-পাথরে চাপা পড়া পাইপে কোথায় লিকেজ আছে, তা বের করাই এখন তাই বড় চ্যালেঞ্জ তিতাসের জন্য। আর প্রায় অসম্ভব সঞ্চালন লাইনের সংস্কার।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, ‘যদি কোনো ইনফরমেশন পায় যে কোথাও লিকেজ রয়েছে তাহলে আমরা সাথে সাথে মেরামত করি, আমাদের ইমার্জেন্সি সেল রয়েছে। আর নিয়মিত জোন সিলেক্ট করে লিকেজ চিহ্নিত করে আমরা তা সঙ্গে সঙ্গে রিপেয়ার করি। এখানে সংস্কার করা যাবে না কারণ এখানে আন্ডারগ্রাউন্ড যেসব পাইপ লাইন আছে সেগুলো অনেক নিচে চলে গেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছয় সাত মিটারও নিচে চলে গেছে।’

এদিকে, নিয়মিত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম চললেও, অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা ঠিক কত তা জানে না তিতাস। তবে শুধু ৫ আগস্টের পর থেকেই চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তারা। কর্মকর্তাদেরও অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও অস্বীকার করলেন না তিতাসের এমডি।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, ‘আমরা প্রচুর অবৈধ লাইন কাটছি কিন্তু আবার তা লেগে যাচ্ছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিছু ব্যবহারকারী সাথে কন্টাক্টার ও আমাদের অভ্যন্তরীণ লোকেরও যোগসাজশ আছে। সেক্ষেত্রে আমরা তদন্ত করে শাস্তি আওতায় আনছি।’

তবে, বিতরণ লাইন সংস্কারের দায়িত্ব তিতাসকেই নিতে হবে জানিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে বসানো সঞ্চালন লাইনও প্রতিস্থাপনযোগ্য।

এমআইএসটি অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ একজন গ্রাহক যখন একটা গ্যাস বিল দেয়। এই টাকা মধ্যে ট্রান্সমিশন ডিস্ট্রিবিউশন ও উন্নয়ন বাজেট থাকে। পাইপ লাইনের রুট আমরা সার্ভে করি রুটের আট মিটারের দুপাশে কোনো স্থাপনা হয় না। এগুলোকে মেরামত ও প্রতিস্থাপন টেকনিক্যালি সম্ভব এবং তারা এটা করতে বাধ্য।’

এদিকে বছরের পর বছর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আশ্রয় দিয়ে তিতাস গ্রাহক সেবায় ব্যর্থ হয়েছে বলে মত ক্যাব উপদেষ্টা শামসুল আলমের। সংযোগ বিচ্ছিন্নকে নাটক মন্তব্য করে তিনি বলছেন, সিস্টেম লস না কমার দায় তিতাসকেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিতে হবে।

ক্যাব উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘ অবৈধ গাস নেটওয়ার্ক আছে এ ধরনের কথা সেই ২০১৫ সালের আদেশে আছে, সেই আদেশের ওপর ভিত্তি করে সে আদেশ বাস্তবায়ন না করার অপরাধে এবং অবৈধ সংযোগ এখন পর্যন্ত আছে বিদ্যমান আছে। এসব অভিযোগ তিতাসের বিরুদ্ধে এনে ব্যবস্থা নেয়া, আর এই অবৈধ লাইন কাটার সরাসরি বিআরসি নিজের দায়িত্বে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে করবে প্রয়োজনে আর্মি নিয়োগ করবে।’

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কারিগরি সমস্যার কারণে একটি কোম্পানির সিস্টেম লস থাকতে পারে ২ শতাংশ, আর বিতরণ লাইনে হতে পারে সর্বোচ্চ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এএম