এক বছরে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম ইপিজেড; হুমকিতে শিল্পের সুনাম-ভাবমূর্তি

চট্টগ্রাম ইপিজেড
চট্টগ্রাম ইপিজেড | ছবি: এখন টিভি
1

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে অর্ধশত শ্রমিক অসন্তোষ, সংঘর্ষ, কারখানা বন্ধ হওয়া, সবশেষ আগুনের ঘটনা- সব মিলে বিপর্যস্ত দেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রধান রপ্তানিকারক অঞ্চল- চট্টগ্রাম ইপিজেড। সবশেষ গতকাল (শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর) ৩৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা প্যাসিফিক জিনসের আটটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। ৪২ বছরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেও সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনায় হুমকির মুখে পড়েছে সুনাম ও ভাবমূর্তি।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম ইপিজেডে স্মরণকালের ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় অ্যাডামস ক্যাপস এবং জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টের আটতলা ভবন। ১৭ ঘণ্টারও বেশি সময় পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হাজার কোটি টাকার সম্পদ, তিন হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান।

একইদিন শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয় দেশের অন্যতম বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনসে। শ্রমিকদের সংঘর্ষে শুক্রবার প্যাসিফিক জিনসের আটটি প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। উপার্জন হারায় প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক।

শুধু তাই নয়, গেলো এক বছরে এ ইপিজেডে জেএমএস, মেরিকোসহ অন্তত ১৫টি কারখানায় প্রায় ৫০টির মতো শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। বন্ধ ও নিলাম হয়েছে কয়েকটি কারখানা। রপ্তানিকারক অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডসহ অর্ধশত শ্রমিক অসন্তোষ, সংঘর্ষের ঘটনা ভয় ধরিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনে।

বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘এটা ভিন্ন ধরনের একটা ওয়ার্কার আনরেস্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে, ম্যানেজমেন্ট বলতে আমি মালিক না, যারা ম্যানেজিং স্টাফ তাদের কথা বলছি। তাদের সঙ্গে ওয়ার্কারদের যে পরিমাণ দ্বন্দ্ব গতকাল দেখেছি এবং ফিজিক্যালি অ্যাসোল্ট হতে দেখেছি আমার নিজেরই ভয় লাগছে যে, সামনে ফ্যাক্টরি কী করে চালাবে।’

আরও পড়ুন:

১৯৮৩ সালে চট্টগ্রামের দক্ষিণ হালিশহর এলাকায় ৪৫৩ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠে সিইপিজেড। শুল্কমুক্ত এলাকা, বন্দরের কাছাকাছি অবস্থান, আমদানি-রপ্তানিতে কম খরচ সবকিছু মিলিয়ে ৪২ বছরে এ ইপিজেড হয়ে ওঠে বিনিয়োগকারীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। এখানে ১৩টি দেশের বিনিয়োগ ছাড়িয়েছে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার। বছরে রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। স্পর্শকাতর এলাকায় এমন অস্থির পরিবেশ ও আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজ করতো দোতলা-তিনতলায়। ফায়ারটা হয়েছে সাততলায়। এখান থেকে ফায়ার ফাইটিংয়ের টিম ওখানে যেতে যেতে আগুনটা তারা মনে করেছে যে, তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেখানে সক্ষমতা আছে শুধু ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের। তারাই আগুনটা নির্বাপণের প্রচেষ্টা করতে পারে।’

সবশেষ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস জীবন বাজি রেখে কাজ করলেও, যন্ত্রপাতি ও দক্ষতার অভাবকে দুষছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া কারখানাগুলোতে কী ধরনের রাসায়নিক থাকে, দুর্ঘটনায় কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে তারও আগাম ধারণা নেই কারও।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘পাশ্ববর্তী যে বিল্ডিংটা ছিল, খুবই সন্নিকটে। এটা সেটব্যাকটা ছিল না। যার কারণে আমাদের কোনো ফায়ার ফাইটাররা ওখানে পজিশন নিতে পারেন নাই। যার কারণে এটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। একটু দূরে, দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের সেফটিটা এনশিউর করে আমরা এ কার্যক্রম করেছি। যার কারণে একটু সময় লেগেছে।’

গেলো এক বছরে অস্থির সময় পার করা দেশের শীর্ষ এ ইপিজেডটিতে এমন অস্থিরতায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ প্রতিটি ঘটনা যথাযথভাবে তদন্তের আহ্বান তাদের।

এসএস