শুধু রাজধানীর মিছিল মিটিং নয়, শহরে-প্রান্তরে, রাজপথের মোড়ে মোড়ে সমানভাবেই শক্তির জানান দিচ্ছে ইসলামী দলগুলো।
শুধু বক্তব্য বিবৃতিতে নয়, সামনের নির্বাচনে ভোটের মাঠে তারা যে একটি কার্যকর শক্তি হয়ে উঠতে চাচ্ছে, তার একটা সম্মিলিত প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, পিআরসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
এটা বাস্তব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত আন্দোলনের এই যুগপৎ পথচলা যে এখনও আছে, তার ইঙ্গিত মেলে একসঙ্গে করা দলগুলোর সবশেষ সংবাদ সম্মেলন থেকেও। দলগুলোর নেতারা বলছেন, আনুষ্ঠানিক কোনো জোট না হলেও নির্বাচনি আসন সমঝোতার পথে অনেকদূরই এগিয়েছে সমমনা দলগুলো।
আরও পড়ুন:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘এটা তো নির্বাচনি জোট না। একটা নির্বাচনি সমঝোতা। এখানে তো আমাদের জোট প্রধান নেই। এখানে প্রত্যেকদিন একেকটা দলের অফিসে বৈঠক করি।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বেশ কিছু ইসলামী দল ও আরও কিছু দল যারা ইসলামী নয়। আমরা অভিন্ন কর্মসূচিতে এক সঙ্গে পথ চলছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে আমরা এক সঙ্গে রাজপথে থাকবো।’
যদিও এই দেশপ্রেমিক এই দলগুলোর তালিকায় থাকা দলগুলোর মধ্যে ছাত্রদের দলও ছিলো। জুলাই সনদ স্বাক্ষর পরবর্তী রাজনীতির মাঠে বরং এটা শোনা যাচ্ছে, ইসলামী জোটে নয়, বিএনপির দিকেই যাচ্ছে এনসিপি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম সাইফ মোস্তাফিজ বলেন, ‘আমার যদি ব্যক্তিগত মত দেয় তাহলে কোনো যুক্তিতে কারো সঙ্গে যাওয়ার পক্ষপাতিত্ব না। আমরা মনে হয় আমরা যদি একটা সিটও পায় তাহলে আমার একা আগানো উচিত। কিন্তু দলীয় জায়গা থেকে আমি বলতে পারি যে রাজনীতিতে অনেক সমীকরণ থাকতে পারে।’
যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে একটা জোট স্পষ্ট হওয়ার পর, বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে পাল্টা কৌশল নিতে দেখা যাচ্ছে। তারা এখন, হেফাজতসহ কওমি ঘরানার দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে মামুনুল হকের মতো নেতাও আছেন। এমন অবস্থায় প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে, যুগপৎ দিয়ে যে সমঝোতার যাত্রা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে, তা শেষ পর্যন্ত টিকবে তো?
কওমি ধারা এই ইসলামিক নেতা বলছেন, ইসলামী দলগুলোর ঐক্য মাঠের দাবি, তবে তারা এমন কিছুও করতে চান না, যাতে বিএনপি মাঠে একা হয়ে যায়।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘আমাদের জনতা এখন চাচ্ছে ইসলামপন্থিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ পরিচালনা করুক বা নির্বাচনকে ফেস করুক। কাজেই এটাকে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বাকি বিএনপিকে আমরা বৈরিতার দিকে ঠেলে দিতে চাই না।’
বিএনপির নীতি নির্ধারকরা বলছেন, সবদিক বিবেচনা করে, তারা যেভাবে ইসলামী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন, তাতে তারা আশাবাদী।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ইসলামপন্থি যেসব দল আছে তারা যে সবাই একমত তা নয়। একত্রিত হয়ে নির্বাচন করবে এটা আমাদের মনে হয় না। অতিথে যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল তারা যদি আমাদের বলে আমরা অবশ্যই বিবেচনা করবো।’
দর্শনগত পার্থক্য পেছনে ফেলে রাজনীতির মাঠে এক সুরে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে ইসলামী দলগুলো, তা অভূতপূর্ব। কিন্তু এই ঐক্য নির্বাচনি ঐক্য কি-না, তা বলার সময় যে এখনও আসেনি, তাও স্বীকার করছেন, দলগুলোর নেতারা। তবে রাজনীতির এসব সমীকরণের বাইরে, জোট হলেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের নতুন সংশোধনীও নির্বাচনি সমীকরণ ঠিক করতে ভূমিকা রাখবে সেটিও অস্বীকার করা যায় না।





