দেশে এখন
বিশেষ প্রতিবেদন
0

নির্বাচনের আগে সংস্কার; বিশ্লেষকদের মত যথাযথ আর রাজনৈতিক দলের দাবি ন্যূনতম

যথাযথ সংস্কার না করে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা সরকার হিসেবে দুর্বল হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সত্যিকার অর্থে সংস্কার না হলে পরবর্তীতের কোনো লাভ হবে না বলেও মনে করেন তারা। রাজনীতিবিদরা প্রকৃত ক্ষমতা হাতে নিতে চাইলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতেই হবে। যদিও ন্যূনতম সংস্কারের পরেই দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার প্রায় সব ক'টি দল।

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথগ্রহণের সাড়ে পাঁচ মাস আর নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার এক মাস অতিবাহিত হচ্ছে। যদিও সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার।

দিন যতই যাচ্ছে সংস্কারের আলাপ ক্ষীণ হয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার চাপ বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে। দু'মাস আগে বা পরে, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন চায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। অন্যথায় অনাস্থা, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ দেশ নানা সংকট পড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।

বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ৫ আগস্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানো হয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর হাফিজ উদ্দীন বলছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে তিন থেকে চার মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

মেজর হাফিজ উদ্দীন বরেন, 'জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বয়স ২৫ থেকে ২১ করে দেয়া হয়েছে। একটা দল, জাতীয় নাগরিক কমিটিকে তারা সুযোগ দিতে চায়। যাদের নিরপেক্ষ থাকা উচিত, তারাও যদি এভাবে একটি দলকে সমর্থন করতে যায় তাহলে সেটা ভালো লক্ষণ বলে মনে হয় না। এগুলো সময়ক্ষেপণ বলে মনে করি। তাদের প্রধান কাজ যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া, সেটি তাদের মনে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।'

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বরাবরই সংস্কারকে গুরুত্ব দেয়া হলেও অবশেষে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

তিনি বলেন, 'এই ১৫ বা ১৬ বা ১৭ বছরে যে পরিবেশ বা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে একটা নির্বাচন করলে সে নির্বাচনটি কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন নাও হতে পারে। তবে তার আগে যে পরিমাণ অ্যামেন্ডমেন্ট হওয়া দরকার, সেটি হওয়াটা আমরা জরুরি মনে করি। তবে আমরা এটা মনে করি না যে, অন্তর্বর্তী সরকার সকল ক্ষেত্রে সকল সংস্কার করে তারপর একটা নির্বাচন দিক। কোনোভাবেই ২০২৫ সাল পার হওয়া উচিত হবে না।'

নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষণ নেই অভিযোগ করে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, জনগণের কাছে আস্থা হারিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

তিনি বলেন, 'এই সরকার বেশিদিন থাকলে, আমাদের সমস্ত অর্জনগুলো বিপন্ন হয়ে যেতে পারে। মানুষের কথায় সন্দেহ, সরকারের কথায় বিশ্বাস করে না। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভেতরে করবে তারও নিশ্চয়তা তারা দেয় না।'

তবে মুখে সংস্কারের কথা বললেও রাজনৈতিক দলগুলো যেকোনো মূল্যে দ্রুত ক্ষমতায় আসতে চায় ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ না করে ক্ষমতায় বসলে নতুন সরকার খুব দুর্বল হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবুল কাশেম ফজলুল হক।

তিনি বলেন, 'জনগণের পক্ষ থেকে চিন্তা করা দরকার যে, মরা কী আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই? না আগের খারাপগুলো যথাসম্ভব কমিয়ে, ভালোগুলো একটা বাড়িয়ে সামনে যেতে চাই। এই বিবেচনা তো কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো নেতার মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় না। যারা এনজিও করে, সিভিল সোসাইটি করে, তাদের দিকে মানুষ কনে যাচ্ছে? কারণ আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সকলের জন্য কোনো নেতৃত্বে পা বাড়াচ্ছেন না। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। যদি তার ক্ষমতা যায়ও তাদের হাতে ক্ষমতা থাকবে না।'

বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে কতটা? ন্যূনতম সংস্কার আর যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসার আকাঙ্ক্ষার কাছে উপেক্ষিত থাকবে কি জনগণের মুক্তি?

এসএস