দেশে এখন
বিশেষ প্রতিবেদন
0

কী থাকছে আগামীকালের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে?

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। আগামীকালের (মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর) ঘোষণাপত্রে বিগত সরকারের শাসনামল থেকে মুক্তির প্রেক্ষাপট ও আগামীর বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের রূপকল্প থাকবে। এই ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকলেও এটি একটি দলীয় ঘোষণাপত্র হবে বলে মনে করেন অনেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ঘোষণাপত্র নিয়ে যেতে হবে অংশীজনদের কাছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরুর ৩৪ দিনের মাথায় কেঁপে ওঠে শেখ হাসিনার মসনদ। যেদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা হয়।

এর একদিন পরই ছাত্র-জনতার বিজয় এলেও কোন প্রেক্ষাপটে এই অভ্যুত্থান? সে লিখিত ঘোষণা আসেনি গত পাঁচ মাসেও। তাই বছরের শেষ দিন মঙ্গলবার লিখিত দলিল জাতির সামনে তুলে ধরতে চায় গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সমন্বয়করা বলছেন, ৭২ এর সংবিধানে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা এবং গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়নের কথা তুলে ধারা হবে জুলাই ঘোষণাপত্রে। পাশাপাশি স্থান পাবে অভ্যুত্থান পরবর্তী আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আকরাম হোসাইন বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের প্রক্লেইমেশন পরবর্তী যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল পরবর্তীতে সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন ২০২৪ এ এসে নতুন বাংলাদেশ কেমন হতে পারে? আমরা কীসের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ চাই, সেই জিনিসগুলোর প্রতিফলন এর মধ্যে ঘটবে।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, 'এউ জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে চাই। এবং সেই সাথে এখানকার যারা ওয়ারিয়র তাদেরকেউ এই স্বীকৃতিটা আমরা দিতে চাই। যেন কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এখানে না থাকে।'

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনের নেতারা বলছেন, অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সবার মতের প্রতিফলন থাকবে জুলাই ঘোষণাপত্রে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আকরাম হোসাইন বলেন, 'এই পতনের জন্য কিন্তু সবার সাথে বলে বলে এক দফা ঘোষণা করা হয়নি। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলো বাই নেম, তাদের বিএনপি, জামায়াত বিভিন্ন দল বাই নেম অংশগ্রহণ করেনি। এখানে সবাই জনগণ হিসেবে, বাংলাদেশকে সবাই ওউন করে সবগুলো রাজনৈতিক দল থেকেই সব ধরনের সবপক্ষ এবং মতের মানুষ এখানে অংশ নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, 'এটা গোটা বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান যারা করেছে সকলের সাথে কথা বলে, স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলে এবং জনমানুষের যে আকাঙ্ক্ষা আছে তারই একটা প্রস্ফুটিত রূপ হবে।'

তবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম মনে করেন, এটি হবে একটি দলীয় ঘোষণাপত্র।

তিনি বলেন, 'এটা একটা ঘোষণা থাকতে পারে যে আমরা এই এই কারণে আসলে যুক্ত হয়েছিলাম। এবং আমরা এই এই অর্জন করতে চাই, এর মধ্যে আমাদের সাথে এরা এরা আসছে। এটার এক ধরনের একটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। ৫ তারিখ বা ৮ তারিখ যখন তারা সরকার গঠন করছে তখন কিংবা তার পরপর যদি করতো, যখন তাদের সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেনি, তখন করলে এটা একটা জাতীয় দলিল হতে পারতো। এখন যেটা হবে এটা তো আসলে তাদের একটা দলীয় ঘোষণাপত্র হবে।'

গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সকল পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই জুলাই ঘোষণাপত্রের স্থায়ী ভিত্তি তৈরি হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক।

হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মির্জা গালিব বলেন, 'একটা বিশেষ কন্ডিশনে আপনি নয় দফা দিলেন। সেখান থেকে আপনি এক দফায় গেলেন। সেখানে তো অত্যন্ত লিমিটেড টাইম। কারণ সেটা ওন দ্যা ফ্লাই করতে হয়েছে। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী যখন আমরা এসে দাঁড়ালাম, যেখানে বিপ্লবের যারা পার্ট তাদের সাথে আমার কথা বলার সুযোগ আছে তাহলে সে জাতীয় ঐক্য কেন আমি ভায়োলেট করবো? কেন তার বাইরে গিয়ে আমি কিছু একটা করবো? এটা একটা প্রপোজাল হিসেবে আসার পর সবার সাথে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি একটা জায়গায় যাই তাহলে একটা একটা পার্মানেন্ট সাসটেইনেবল সলিউশন হবে।'

৩১ শে ডিসেম্বর ঘোষণা এলেও জুলাই ঘোষণাপত্র কার্যকর হবে ৫ আগস্ট থেকে।

এসএস