দেশে এখন
বিশেষ প্রতিবেদন
0

ইসকন বন্ধের বিষয়ে ধর্মীয় সংগঠন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় ইসকন বন্ধের দাবি জোরালো করছে দেশের একাধিক সংগঠনসহ অনেকে। দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড জড়িতের অপরাধ প্রমাণিত হলে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। একই সুরে তাল মিলিয়েছেন ধর্মীয় সংগঠনের নেতারাও। তবে, সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসকন।

সম্প্রতি বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তারের পরই আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন নতুন করে আলোচনায় আসে। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ দখল করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ছাড়িয়ে নিতে সেখানে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করে তার অনুসারীরা।

এ সময় পুলিশ ও আইনজীবীদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় চিন্ময়ের উগ্র সমর্থকরা । এরপর তারা কুপিয়ে হত্যা করে চট্টগ্রামের সরকারি আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে। বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক উগ্র আচরণের কারণে দেশে ইসকন নিষিদ্ধ ও তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি ওঠে। দাবির পক্ষে দেশের প্রায় সব জেলায় বিক্ষোভ করে লাখ লাখ মানুষ।

উগ্র ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করা সংগঠন ইসকন ১৯৬৬ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ নামে। তবে, বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসকন যাত্রা শুরু করে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদ ও শান্তি প্রচারের দাবি করলেও অভিযোগ আছে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে ইসকন যুগ যুগ ধরে কাজ করছে। আলোচিত বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা অমিত সাহাও ইসকনের সদস্য বলে গুঞ্জন আছে।

এমনকি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ইসকনের সহায়তাকারী বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।

এরই মধ্যে রাশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে ইসকন নিষিদ্ধের জন্য মামলা হয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপরাধ প্রমাণিত হলে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করার দাবি যৌক্তিক।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘গুজব বা কেউ হুমকি দিল সেটার উপর ভিত্তি করে না। যদি প্রমাণিত হয় যে এই সংগঠনটি সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তাহলে সেই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে।’

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর তার অনুসারীর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। সেই রেশে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ- হাই কমিশনার কার্যালয়েও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ভারতীয়রা।

ফলে দুই দেশের সম্পর্কেও তৈরি হয় বৈরিতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসকন ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোন দেশ বা রাজনৈতিক দল কোন স্বার্থ হাসিল না করতে পারে, সে বিষয় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এই ধরনের ষড়যন্ত্র রুখতে কূটনৈতিকভাবে সরকারের হস্তক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মত তাদের।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, 'সম্পর্ক মূল জায়গায় বা ভিত্তি যেন দুই দেশের জনগণের একটা অংশগ্রহণ ও অবস্থান থাকে। এভাবে যদি চিন্তা করতে পারে দুই দেশ তাহলে শুধু ইসকন কেন যেকোনো বিষয় সমাধান করা কঠিন কাজ নয়।'

এদিকে, সরকারিভাবে ইসকনের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর দাবি জানিয়েছে ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা। অপরাধ প্রমাণিত হলে যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মত তাদের।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার বলেন, 'প্রতিবেশী দেশের যে উস্কানি তাদের নিরাপত্তার সাথে বাংলাদেশের অবস্থান, কর্মকাণ্ড জড়িত। এখানে তারা যদি কোনো উপায় না পায় তখন তারা সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে। আমার ধারণা চিন্ময় ওইরকম প্রলোভনে পড়ে এই কাজটা করেছে। কারণ তার সাথে ইসকনের কোনো সম্পর্ক আছে সেটা ইসকন স্বীকার করছে না। আবার ইসকন তাকে বের করে দিয়েছে তখন বিবৃতি দেইনি এখন দিচ্ছে। কাজেই ইসকনের একটা পরোক্ষ সম্মতি রয়েছে।’

তবে, ইসকনের বিরুদ্ধে আসা সব ধরনের অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংগঠনটি। যেহেতু চিন্ময় কৃষ্ণকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে সেক্ষেত্রে তার অপরাধের দায় নিতেও নারাজ ইসকন। একই সাথে কোন ইসকন সদস্য যদি সংগঠনটির আদর্শ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয় বলেও জানিয়েছেন ইসকন বাংলাদেশের কার্যকারী সদস্য।

ইসকন বাংলাদেশের কার্যকারী কমিটির সদস্য বিমলা প্রসাদ দাস বলেন, 'রাস্তাঘাটে কোনো একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করলে সেটার দায়ও ইসকনের উপর আসছে। হাজারি গলিতে কি হলো সেটাও ইসকন। আদালতে কারা কি করলো সেটাও ইসকন। আরে আমরা তো এখানেই বসে আছি। এইগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।'

বাংলাদেশে ১৩০ টির বেশি ইসকন মন্দির রয়েছে। যেখানে কয়েকটি মন্দিরে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প চলছে। বিদেশ থেকে বড় পরিসরে অর্থ আসার গুঞ্জন থাকলেও ভক্তদের অনুদানেই এসব অর্থের সংস্থান হয় বলে দাবি করেছে ইসকন।

ইএ