আর এ মহেন্দ্রক্ষণকে তিনি উদযাপন করছেন আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে তাহাজ্জুদের নামাজে ১০ খতম কোরআন তেলাওয়াতের উদ্যোগ নিয়ে। ব্যাতিক্রম এ ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র মসজিদে।
হাফেজ মাহফুজুর রহমান স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'আমি ৭ বা ৮ বছর বয়সেই হাফেজ হই। মাধবপুর উপজেলার হরষপুর মাদ্রাসায় হাফেজ নুরুজ্জামানের কাছে মাত্র ২ বছরে হিফজ শেষ করি। ওই সময়ে আমার মতো এত কম বয়সে কেউ হাফেজ হতে পারেননি। ৫০ বছর পূর্বে শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা খতমে তারাবি পড়ানোর জন্য হাফেজ নিয়োগের জন্য আমার মাদ্রাসায় আসেন। তখন আমিও সেখানে আবেদন করি। পরে প্রতিযোগিতা হলে আমার তেলাওয়াত শুনে সবাই আমাকে মনোনয়ন করেন তারাবি পড়ানোর জন্য। সেই সময় খুব বেশি হাফেজ পাওয়া যেত না বলে মাত্র ৯ বছর বয়সে খতমে তারাবি পড়ানোর জন্য চলে আসি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মসজিদে।'
হাফেজ মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, 'সে সময়ে জেলা শহরের কয়েকটি মসজিদেই শুধু খতমে তারাবি হতো। হাফেজের সংখ্যা খুব বেশি না থাকায় অনেক উপজেলা সদরেও খতমে তারাবি হতো না। সেখানে বিচ্ছিন্ন এক এলাকায় খতমে তারাবি পড়ানো হবে শুনে আশপাশের শাহজীবাজার গ্যাস ফিল্ড, রাবার বাগান, বনবিভাগ ও লাল চান্দ চা বাগানের কর্মকর্তারাও ছুটে আসেন এই মসজিদে। টিনের তৈরি মসজিদে মুসল্লীদের তিল ধারনের ঠাই থাকতো না। এখন সেখানে হয়েছে পাকা বিল্ডিং। এসিরও ব্যবস্থা আছে।'
এ মসজিদ ছেড়ে অন্য কোথাও না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি যে বয়সে খতমে তারাবি পড়ানো শুরু করি তখন বয়স কম থাকায় নিয়মিত রোজা রাখাও সম্ভব হত না। প্রথম বছর আমার তেলাওয়াত শুনে সবাই মুগ্ধ হন। পরে আর আমাকে কোনো ইন্টারভিউ দিতে হয়নি। অন্য অনেক মসজিদ থেকে আমন্ত্রণ আসলেও এ মসজিদের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তারা আমাকে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ দিতেন না। অনেক কর্মকর্তা আর কর্মচারীর বদলী হয়েছে। কিন্তু আমাকে কেউ পরিবর্তন করার কথা চিন্তা করেননি। বরং এক বছর তারাবি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পরের বছরের জন্য নিশ্চিত করা হত আমাকে। টানা ৫০ বছর সুস্থ থেকে তারাবি পড়ানো আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। এই সময়ে আমাকে নিয়ে কেউ কোনো কথাও বলেনি। একবার এক মুসল্লী আমার বদলে অন্য হাফেজ নিয়োগের কথা বললে সেখানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। পরে ওই মুসল্লীকে এখান থেকে বদলী করা হয়েছিল।'
হাফেজ মাহফুজুর রহমান হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একতিয়ারপুর গ্রামের মৃত মকসুদ আলী মোল্লার ছেলে। তার ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে। সবাই লেখাপড়া করছেন। হাফেজ মাহফুজ আহমেদ ১৯৮২ সালে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সিলেট অঞ্চলের শ্রেষ্ট হাফেজ হন। ১৯৮৩ সালে জাতীয় পর্যায়েও পুরস্কৃত হন। যে মাদ্রাসা থেকে তিনি হাফেজ হয়েছেন সেই হরষপুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর মৌলভীবাজারের জামেয়া দ্বীনিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। পরে ঢাকার মনিপুরী পাড়া, নিকুঞ্জ ও যাত্রাবাড়ীতে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীগনর দারুছুন্নাহ মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের প্রধান হিসাবে কর্মরত আছেন।