শোক প্রকাশের ইসলামি বিধান
ইসলামে প্রিয়জনের মৃত্যু শোকে নিঃশব্দ কান্না (Silent Crying) বা অশ্রু বিসর্জন দেওয়া সম্পূর্ণ বৈধ। তবে উচ্চস্বরে বিলাপ করা, কাপড় ছেঁড়া বা ভাগ্যের প্রতি অভিযোগ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর ফয়সালাকে মেনে নেওয়াই মুমিনের পরিচয়।
আরও পড়ুন:
শোকের সময় পঠিত দোয়া (Dua for Calamity)
কারো মৃত্যুর খবর শুনলে প্রথমত পড়তে হয়:
আরবি: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
বাংলা উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
বাংলা অর্থ: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
শোকাতুর ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার দোয়া
আরবি: أَعْظَمَ اللهُ أَجْرَكَ وَ اَحْسَنَ عَزَائَكَ وَ غَفَرَ لِمَيِّتِكَ
বাংলা উচ্চারণ: আ’জামাল্লাহু আঝরাকা ওয়া আহসানা আযাআকা ওয়া গফারা লিমায়্যিতিকা।
বাংলা অর্থ: আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতিদান বাড়িয়ে দিন। তোমাকে উত্তম সান্ত্বনা দিন। তোমার মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন। (সূত্র: ইমাম নববি, আল-আযকার)
আরও পড়ুন:
সদ্য মারা যাওয়া ব্যক্তির জন্য রাসুলুল্লাহ (স.) নিচের দোয়াটি পড়তে বলেছেন। দোয়াটি হলো—
আরবি: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِفُلاَنٍ (بِاسْمِهِ) وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি ফুলানিন (এখানে মৃতের নাম বলতে হবে) ওয়ারফা দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যিন, ওয়াখলুফহু ফি আকিবিহি ফিল গাবিরিন, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রব্বাল আলামিন। ওয়াফসাহ লাহু ফি কবরিহি ওয়া নাউইর লাহু ফিহি।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি অমুককে (মৃত ব্যক্তিকে) ক্ষমা করে দিন এবং তাকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে উঁচু মর্যাদা দান করুন। তার উত্তরসূরিদের জন্য আপনি তাদের অভিভাবক হন। হে উভয় জগতের প্রতিপালক, আপনি তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করুন, তার কবরকে প্রশস্ত করুন এবং তার জন্য তা আলোকিত করুন। (সূত্র: সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৯২০; হিসনুল মুসলিম)
এছাড়া শোকাতুর অবস্থায় এই দোয়াটি পড়া অত্যন্ত সওয়াবের:
আরবি: اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আজুরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ লি খাইরাম মিনহা।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! এই বিপদে আমাকে সওয়াব (প্রতিদান) দান করুন এবং এর বিনিময়ে আমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করুন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ৯১৮)
আরও পড়ুন:
হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সান্ত্বনাসূচক দোয়াটি নিচে উচ্চারণ ও অর্থসহ আলাদা করে দেওয়া হলো:
আরবি: إِنَّ للهِ مَا أَخَذَ وَلَهُ مَا أَعْطَى وَكُلٌّ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ
বাংলা উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি মা আখাজা, ওয়ালাহু মা আ’ত্বা, ওয়া কুল্লু শাইয়িন ইনদাহু বি-আজালিম মুসাম্মা, ফাল-তাছবির ওয়াল তাহতাসিব।
বাংলা অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ যা নিয়ে যান তা তারই; আর যা তিনি দান করেন তাও তাঁরই। তাঁর কাছে সবকিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ করো এবং আল্লাহর কাছে প্রতিদান আশা করো। (সূত্র: সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
পরবর্তীতে কন্যার বিশেষ অনুরোধে নবিজি (সা.) হজরত সাদ ইবনে উবাদাহ, মুয়াজ ইবনে জাবাল ও উবাই ইবনে কাব (রা.)-সহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যান। সেখানে ছটফট করতে থাকা অসুস্থ শিশুটিকে যখন নবিজির কোলে দেওয়া হলো, তখন মায়ার আতিশয্যে আল্লাহর রাসুলের দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল।
হজরত সাদ (রা.) বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "হে আল্লাহর রাসুল! একি? (আপনিও কাঁদছেন?)" নবিজি (সা.) উত্তরে বললেন:
"এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দার অন্তরে গচ্ছিত রেখেছেন। আর আল্লাহ তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।" (বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং আপনজনের মৃত্যুতে উচ্চস্বরে বিলাপ করা যাবে না, তবে অশ্রু বিসর্জন দেওয়া জায়েজ। মুমিনের দায়িত্ব হলো—বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান কামনা করা।





