কবর জিয়ারত শেষে নির্বাচন কমিশনে এনআইডি রেজিস্ট্রেশনে যাবেন তিনি। এরপর সেখান থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থাণে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কথাও দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে আগামীকাল (শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর) ভোটার নিবন্ধন আবেদন করতে নির্বাচন কমিশনে আসবেন তারেক রহমান। সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। তবে তারেক রহমান এখনো নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেননি।
গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি জানান, শনিবার ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের অফিস খোলা থাকবে। ওই দিনই ভোটার হওয়া, ভোটার আইডি ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সব কার্যক্রম তিনি (তারেক রহমান) সম্পন্ন করবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ভোটার হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে; দেশের যেকোনো নির্বাচনি এলাকার ভোটার হলেই চলবে। তারা বলেন, গণমাধ্যমে থেকে জানতে পেরেছি আগামীকাল ভোটার হওয়ার জন্য তারেক রহমান ইসি ভবনে আসবেন। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য আমাদের হাতে আসেনি।
তারেক রহমানের ভোটার হওয়া নিয়ে আইনি কোনো জটিলতা আছে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার পর তিনি ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করবেন কমিশন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এক্ষেত্রে আইনি কোনো জটিলতা নেই।
ওয়ান-ইলেভেন সরকার ২০০৭ সালে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। এরপর থেকে সেখানেই আছেন। লন্ডন থেকেই দল পরিচালনা করে আসছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, ২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তারেক রহমান লন্ডনে যান এবং এরপর দেশে ফেরার সুযোগ না পাওয়ায় ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলানোর পর তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান দেশে এসে ভোটার তালিকায় নাম লেখান। তারেক রহমানের মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টের ঠিকানায় ভোটার হন।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) ২৫ ডিসেম্বর দেশে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর (বুধবার) লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানসহ কয়েকজন সফরসঙ্গী নিয়ে দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন তারেক।
বুধবার দিবাগত (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১২টা ১৫ মিনিটে বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইট তারেক রহমান তার পরিবার ও সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছাড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে অবতরণ করে বিমানটি। সেখানে যাত্রাবিরতি শেষে থেকে ঢাকার পথে রওনা করে। এদিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমানটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরে নেমেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোনে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়াও বন্দর থেকে বেরিয়ে এসে লাগোয়া বাগানে খালি পায়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তারেক রহমান। এ সময় তিনি একমুঠো মাটি হাতে তুলে নেন।
সেখান থেকে বের হয়ে সরাসরি ৩০০ ফিট এলাকায় যান তারেক রহমান। সকাল থেকেই রাজধানীর কুড়িল–বিশ্বরোডের ৩০০ ফিট এলাকায় দলবদ্ধভাবে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। সেখানে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে তারেক রহমান সেখানে উপস্থিত হন।
সংবর্ধনাস্থলে এসে তারেক রহমান বলেন, ‘এদেশে পাহাড়ের লোক আছে, সমতলের আছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব বিশ্বাসের মানুষ আছে। সবার জন্য নিরাপদ দেশ গড়ে তুলবো। সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘একজন মা যেমন স্বপ্ন দেখেন, তেমন নিরাপদ দেশ গড়ে তুলতে চাই। গত বছরের ৫ আগস্ট এদেশের সব শ্রেণির মানুষ রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। এখন আমরা সবাই মিলে নিরাপদ দেশ গড়ে তুলতে চাই।’
৩০০ ফিট এলাকায় সংবর্ধনা শেষে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তারেক রহমান। সেখান থেকে পরবর্তীতে রাজধানীর গুলশানে থাকা বাসভবন ফিরোজায় যান তিনি।
এরপর আজ (শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর) জুম্মার নামাজের পর শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কবর জিয়ারত শেষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।





