২০১৪ সাল থেকে দলটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে আসছে যে, বর্তমান সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়, তাই দেশের জন্য একটি নতুন ‘জাতীয় সনদ’ ও একটি প্রকৃত ‘গণতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামো’ প্রয়োজন। আজ (শনিবার, ২৯ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় আয়োজিত ‘মাথাল মিছিল’-এ বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকেই তারা জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। তাদের দেওয়া ১৪ দফায় রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কার ছিল অন্যতম প্রধান বিষয়। গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করে তারা ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রকাঠামো’ ভাঙার রাজনৈতিক লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে, এবং ছাত্র ফেডারেশনের শাকিলসহ বহু আন্দোলনকারীর আত্মত্যাগের প্রমাণ।’
তিনি জানান, গত এক বছরে দলটি ‘রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি’ নিয়ে কাজ করছে, যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তার মতে, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই সংবিধান সংস্কার করতে হবে এবং সংসদকে সংবিধান সংশোধনের পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করা জরুরি।
তিনি বলেন, ‘সামনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন হওয়া উচিত ‘সংবিধান সভার নির্বাচন’ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন—উভয়ই একসাথে।’
দেশের শ্রমিক, কৃষক ও খেটে–খাওয়া মানুষের ন্যায্য অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, মানুষের সঠিক হিস্যা নিশ্চিত করতে হলে এমন প্রতিনিধিদের সংসদে পাঠাতে হবে, যারা সত্যিকারের জনগণের দাবি তুলে ধরবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ধর্ম, জাতীয়তা বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের মর্যাদাহানি করা যাবে না। দেশের প্রতিটি নাগরিককে সমান মর্যাদা দিতে হবে। আগামী দিনের সরকার হতে হবে জনমানুষের সরকার।
গণসংহতি আন্দোলনের রাজনীতির লক্ষ্য ক্ষমতা দখল নয়, মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করা বলে মন্তব্য করেন ঢাকা-১৮ আসনে গণসংহতির মনোনীত প্রার্থী ও সমাবেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিলকিস নাসিমা রহমান তুহিন। তিনি বলেন, বিগত শাসনামলগুলোর বঞ্চনা, বৈষম্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি আর দলবাজির অভিশাপ আমরা অনেক দেখেছি। এই দেশের মানুষ পরিশ্রম করে, ঘাম ঝরিয়ে সম্পদ সৃষ্টি করে, কিন্তু সেই সম্পদের মালিকানা, ন্যায্য অংশীদারিত্ব, নাগরিক অধিকার—এসব কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছায় না। জনগণ শুধু ভোট দেয়, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা পায় না। আমরা এই কাঠামো ভাঙা রাষ্ট্রেকে জনগণের ক্ষমতার উৎসে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।
বিলকিস নাসিমা রহমান বলেন, আজ পর্যন্ত আমরা এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা দেখেছি যেখানে দল ক্ষমতায় এলে জনগণ দূরে সরে যায়, আর দলগুলো রাষ্ট্রকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে। এই রাজনীতি আমরা ভাঙতে চাই। আমরা এমন দেশ চাই যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধির জবাবদিহির কাঠামোর মধ্যে থাকবে এবং প্রতিনিধিরাও জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। গণতন্ত্র মানে শাসকের ইচ্ছা নয়—গণতন্ত্র মানে মানুষের মুক্ত সিদ্ধান্ত।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, কেন্দ্রীয় সদস্য লুভানা তাবাসসুম, সাইফুল্লাহ সিদ্দিক রুম্মন, বেনু আক্তার, মিরপুর অঞ্চলের সংগঠক রতন তালুকদারসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।





