অন্য বছর এ সময়ে ফলের ভারে নুয়ে পড়তো দিনাজপুরের লিচু গাছ। ফল বাঁচাতে দিতে হতো বাঁশের খুটি। অথচ এ বছর গাছে লিচুর সংখ্যা খুবই কম। কোন কোন ডাল একেবারেই ফলশূন্য।
এবারও ফল বাঁচাতে লড়াই করতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকরা বলছেন, এক দশকের মধ্যে এবার ফুল এসেছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই অনাবৃষ্টি আর তাপপ্রবাহের ধাক্কা। সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস লিচুর জন্য আদর্শ আবহাওয়া। কিন্তু এবছর তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৪০ এর কোটা, কখনও তার চেয়ে বেশি। তাই আশংকা এবছর ৪০ শতাংশ ফলন কম মিলবে।
লিচু বাগানের একজন মালি বলেন, 'মুকুল আসার পর রোদের তাপমাত্রা ও আকাশের পানি পাওয়ার কারণে সব জ্বলে পুড়ে ছাড়খার। লিচুর ফলন নাই এবারে এই তাপ প্রবাহের কারণে।'
ক'দিন পরেই শুরু হবে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। লাল রংয়ের টসটসে লিচুতে ভরে ওঠার কথা দিনাজপুর। কিন্তু মাথায় হাত পড়েছে বাগান কেনা ব্যবসায়ীদের। যারা ইতোমধ্যেই বাগান কিনেছেন তারা লোকসানের আশংকায় দিন গুনছেন। কিছু ব্যবসায়ী ফলন দেখে কয়েকদিন পর সিদ্ধান্ত নেবেন।
একজন ব্যাবসায়ী বলেন, 'আমি দেখছি যে আসলে কী পরিমাণ গুটি টিকে যায়। তার ওপর ভিত্তি করে এটার দাম কেমন হবে। ফলের ওপর নির্ভর করছে সব। সেজন্য আমার ব্যবসাটা এখনও থামিয়ে রেখেছি।'
সুস্বাদু লিচুর একমাত্র জেলা দিনাজপুর। এই জেলার ১৩ উপজেলাতেই কম বেশি লিচু হয়। তবে সবচেয়ে নামকরা হলো সদর উপজেলার মাসিমপুর ও বিরল উপজেলা। এ বছর পাঁচ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে লিচুর। এর মধ্যে বোম্বাই জাতের লিচুর ৩২৩৮ হেক্টর, মাদ্রাজি ১০৭৮ হেক্টর, চায়না থ্রি ৭০৭, বেদানা ৩১০, চায়না টু ১৩২ এবং কাঁঠালি জাতের লিচু আবাদ হয়েছে ২৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ১১৭ টন।
কৃষি বিভাগ বলছে, এখন যে অবস্থায় আছে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভোর বেলা এবং সুর্য ডোবার পর সেচ দিলে রক্ষা পাবে সবচেয়ে রসালো এই মৌসুমী ফল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সেরকম প্রভাব পড়বে না দাবি কর্মকর্তাদের।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুজ্জামান বলেন, 'স্বাভাবিক ঠান্ডা পানি যদি স্প্রে করে গাছের পাতা ও ফলে তাহলে এ তাপ অনেকটা ভরসাম্য অবস্থায় থাকবে। এখন পর্যন্ত ব্যপকহারে ফল ঝরে যাওয়া দেখতে পাচ্ছি না।'
তবে তাপপ্রবাহে সুবিধাও যে হয়নি তা নয়। অতিরিক্ত গরমে এবারে পোকার আক্রমণ অনেকটাই কম। এতে কীটনাশকে কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে। এত ধরণের লিচুর মধ্যে মাদ্রাজি লিচুতে রং ধরবে আর ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে। তারপরই লাল সবুজে ভরে যাবে পুরো দিনাজপুর।