শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের পলিবাহিত উর্বর মাটিতে চাষ হয় আলু, পেঁয়াজ-রসুন, টমোটো, ফুলকপি-বাধাকপিসহ নানজাতের শাক-সবজি। চরাঞ্চল ছাড়াও জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই হয় বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন।
মালচিংসহ নানা আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহারে বাড়ছে সবজির উৎপাদন। তবে উৎপাদনের খরচও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় ফলন ভালো হলেও ফসলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি থেকে রেহাই পাচ্ছে না কৃষক।
একজন কৃষক বলেন, 'টমেটো যখন খেত থেকে বেশি উঠানো হয়, তখন আসলে গাড়ির সংকটের জন্য আমাদের বাজার থাকে না। অনেক ফসল নষ্ট হয়। আমরা অনেক লসে আছি কোল্ড স্টোরেজ না থাকার কারণে। '
ময়মনসিংহ সদরের বোরোরচর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আক্তার বলেন, 'এখানে কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো কৃষক এই পচা নষ্ট হওয়া থেকে ২৫ শতাংশ যে সংগ্রহত্তর ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি তারা লাঘব করতে পারতো যদি কোল্ড স্টোরেজ থাকতো।'
ময়মনসিংহ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয় গৌরীপুর উপজেলায়। এখানকার স্থানীয় জাতের চল্লিশা আলুর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। হিমাগার না থাকায় এখানকার আলু উঠানোর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। মেলে না ন্যয্য দাম। কৃষকদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয় বীজ আলুর সংরক্ষণ নিয়ে। দূর-দূরান্তের হিমাগার ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও তাতে কৃষকদের গুণতে হয় বাড়তি খরচ।
একজন কৃষক বলেন, 'আমাদের রাস্তা নেই নদী পার করে যেতে হয়। ফসল মাথায় করে নিয়ে যেতে হয়। আবার ঘুরে নিয়ে গেলে অনেক টাকা তাদের দিতে হয়। এই এলাকার ভেতরে কোল্ড স্টোরেজ নাই। আমরা ঘরের মধ্যে মাচা বেঁধে ওপরে আলু রাখি। অনেকসময় আলুগুলো নষ্ট হয়ে যায়।'
ময়মনসিংহ গৌরীপুর কলতাপাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র সরকার বলের, 'বীজের আলু সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় পদ্ধতি কার্যকরি না। বীজের পরিমাণ অনেক লাগে। কিন্তু সেটা স্থানীয় কৃষকদের পক্ষে সংরক্ষণ করা খুব কঠিন। এর জন্য একটা কোল্ড স্টোরেজ থাকলে বীজ আলুটা খুব ভালো থাকতো।'
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, সংরক্ষণের অভাবে দেশে প্রতি বছর ফসলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি হয় মোট উৎপাদনের প্রায় ২০ থেকে ৪০ ভাগ। টাকার অংকে যা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মীর্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন , 'প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা আমাদের লস হচ্ছে। আমরা কিন্তু এই জিনিস খেয়াল করি না। সে জায়গায় সরকার কাজ করছে। আমর কাজ করছি এখন।'
ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর ও জামালপুর জেলায় তিনটি করে হিমাগার থাকলেও ময়মনসিংহ জেলায় একটিও নেই। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে ময়মনসিংহসহ দেশের ১২টি জেলায় একটি করে মাল্টিপারপাস হিমাগার নির্মাণ করবে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর।
কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের পরিচালক ওমর মো. ইমরুল মহসিন বলেন, 'মাল্টিপারপাস কোল্ডস্টোরেজ নির্মিত হবে। এবং নির্ধারিত ১২ জেলার মধ্যে ময়মনসিংহও রয়েছে। আশা করছি অতিসম্প্রতি এটা অনুমদিত হলেই আমরা এটা বাস্তবায়নের কাজে নামবো।'
গত রবি মৌসুমে ময়মনসিংহে প্রায় ২১ হাজার ৮৫০ হাজার হেক্টর, জামালপুরে ১৭ হাজার ২৩০ হেক্টর, শেরপুরে ৮ হাজার ৯৯৮ হেক্টর, নেত্রকোনায় ৭ হাজার ৪৩৪ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়। যা থেকে সবজি উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ১৬ হাজার ১৯৫ টন।