দ্রব্যমূল্যের দুরন্ত গতির ঝাপটায় যেন দিশেহারা ক্রেতা। মূল্যস্ফীতির সূচক যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন ছোট হয়ে আসে বাজারের ফর্দ। হিসাবের খাতা থেকে বাদ পড়তে থাকে শৌখিন-বিলাসবহুল পণ্য। ধীরে ধীরে হালকা হতে শুরু করে বাজারের ব্যাগ।
মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া দিনমজুর। সবাইকেই একযোগে চাপে ফেলেছে নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম। তাই বলে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার তাগিদকে তো আর পাশ কাটানো যায় না। ভাবতে হয় বিকল্প ভাবনা।
একটি বেসরকারি অফিসে আয়ার কাজ করে সংসার চালান বিথী আক্তার। মাস শেষে যে মাইনে আসে তাতে মাস শেষ না হতেই হাতে টান পড়ে। দাম বেশি হওয়ায় বাজেট থাকছে না মাছ-মাংসের। তাই এক ভাগা শুঁটকিতেই রাখতে হচ্ছে ভরসা। তিনি জানান, 'মাছ আমরা সপ্তাহেও খেতে পারি না। মাছের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। আমরা তো ধনী মানুষের মতো না।'

দামের দাপটে খাঁচার মুরগি কেনাও কঠিন অনেকের জন্য। তবে বিকল্প আছে পাশেই। ৩শ' টাকার মুরগির বদলে অনেকেই কিনছেন মুরগির গিলা-কলিজা। যার দাম পড়ছে কেজিতে ১২০-১৩০ টাকা। তাতেই তৃপ্তির ঢেঁকুর নিম্নবিত্তের।
আধা কেজি গিলা-কলিজা ৭৫ টাকায় কিনে এক ক্রেতা জানান, আমাদের মতো নিম্নশ্রেণীর লোকজনকে যেটা কমে পাই সেটাই নিতে হয়।
ঝলমলে আলোয় উজ্জ্বল মাছবাজার। তবে দাম শুনে মুখে আঁধার নেমে আসার দশা। মাছের রাজ্যে শুধু ইলিশ নয়- এখন যেন সবাই রাজা। রুই-কাতল-চিংড়ি চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। তাই সাধারণ ক্রেতার ভরসা কাটা মাছে। যার দামটাও স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা কম। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বৃদ্ধিতে কমেছে বিক্রির পরিমাণও।
সরকার নির্ধারিত দামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে আলু-পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য। শুল্ক কমলেও নতুন করে বেড়েছে চিনির দাম। কাঁচাবাজারের অস্বস্তিতে বিকল্প কিছুতে যে থাকবে ভরসা; তারও কোন উপায় নেই। ক্রেতার অভিযোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি সংস্থার তদারকির দুর্বলতাই দায়ী।
কারওয়ানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, বাজারে নিয়মিত যে তালিকা দেয়া হচ্ছে সেটিও পুরোপুরি মানছেন না বিক্রেতারা। যা থেকে কখনো কম, কখনো বেশি দামে পণ্য বিক্রি চলছে। যেখানে পাইকারি থেকে খুচরাতে গেলেই দাম বেড়ে যায় মুহূর্তেই। সেখানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা দুঃসাধ্য।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ভোক্তা অধিকার যেমন আমাদেরকে বলেছিলেন, প্রত্যেকটা ব্যবসায়ী ক্রয় ও বিক্রয় রশিদ যেনো নিশ্চিত করে। সেটা আমরা করেছি। ক্রেতার বিষয়ে পরিদর্শন করা কারো পক্ষে সম্ভব না। এজন্য ভোক্তাকে সচেতন থাকতে হবে।
সংকটকালে স্বল্পমূল্যের পণ্যে আস্থা ক্রেতাদের। তবে এসব পণ্যের মূল্য কতদিন হাতের নাগালে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কায় সাধারণ ক্রেতারা।