সাগর ও নদী থেকে প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা বাগদা ও গলদা চিংড়ির পোনা স্বল্প মূল্যে কিনে খুলনা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ঘেরে চাষ করা হয়। কিন্তু সবসময় মানসম্মত পোনা পাওয়া যায় না। এছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ তো রয়েছেই। এই সমস্যার সমাধানে বিদেশি অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন স্থানে চিংড়ি হ্যাচারি তৈরি করেছে সরকার। সম্প্রতি তীব্র তাপপ্রবাহে উৎপাদিত পোনা মরে যাওয়ায় কুয়াকাটার হ্যাচারির মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
বছরের শুরুতে সাধারণত হ্যাচারিগুলো প্রস্তুত করা হয় পোনা উৎপাদনের জন্য। মার্চের প্রথম সপ্তাহে নদী থেকে মা চিংড়ি সংগ্রহ ও জীবাণুমুক্ত করে ট্যাংকে রাখা হয় ডিম সংগ্রহের জন্য। ডিম থেকে লার্ভা পরবর্তীতে পোনা উৎপাদন করে। ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে সেই পোনা বিক্রি করা হয় ঘের মালিকদের কাছে। বিক্রির আগ মুহূর্তে তাপপ্রবাহে সব পোনা মরে যায়। এতে স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হ্যাচারি শ্রমিকদের।
কুয়াকাটা হ্যাচারি শ্রমিক মো. মাসুম মিয়া বলেন, 'তাপমাত্রা যদি এমন থাকে তাহলে সামনের বার আরও খারাপ অবস্থা হবে।'
কুয়াকাটা জননী চিংড়ি হ্যাচারির সহকারী টেকনিশিয়ান মো. ফজলে রাব্বি বলেন, 'তীব্র গরম হওয়ায় মাছ ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে।'
আধুনিক পদ্ধতিতে পানির মান, চিংড়ির ডিম থেকে পোনা উৎপাদন ও ঘের মালিকদের কাছে তা পৌঁছানো পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন হ্যাচারির টেকনিশিয়ানরা। কিন্তু এবার তাদের সব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা মার খেয়েছে তাপপ্রবাহের কাছে। পানির তাপমাত্রা বেড়ে পোনা মরে যাওয়ায় হতাশ তারা।
কুয়াকাটা জননী চিংড়ি হ্যাচারির সিনিয়র টেকনিশিয়ান মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, 'পানির তাপমাত্রা থাকার কথা ছিল ২৯ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখান থেকে তাপমাত্রা এখন ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় মাছ খাবার খায় নাই। এর ফলে মাছ মারা যাচ্ছে।'
বিগত বছরগুলোতে সফলতার সঙ্গে চিংড়ি পোনা উৎপাদন করলেও এবছর পোনা মরে যাওয়ায় হ্যাচারি মালিকদের ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ রেখেছে পোনা উৎপাদন।
ভাই ভাই চিংড়ি হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফোরকান আকন বলেন, 'দুই বছরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে আমাদের। এই কারণে এখন আমরা রেণু উৎপাদন বন্ধ রেখেছি।'
মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, হ্যাচারি মালিক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সবাইকেই চিন্তায় ফেলেছে। এ নিয়ে গবেষণা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে অধিদপ্তর।
কলাপাড়া মেরিন ফিশারিস অফিসার মো. আশিকুর রহমান বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কীভাবে লোকসান থেকে বাঁচা যায়।'
দেশের রপ্তানির অন্যতম খাত 'সাদা সোনা' খ্যাত চিংড়ি। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাপপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হ্যাচারি মালিকরা সরকারের কাছে প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।