পুতুল নিয়ে খেলার মাঝেই চলছে স্পর্শের ধরণ বোঝানোর শিক্ষা।
৩ বছরের নিহারকে যেন কোন খারাপ স্পর্শ ছুঁতে না পারে, একটা সুরক্ষিত নিরাপদ সুন্দর শৈশব যেন কাটাতে পারে তাই মেয়ের বন্ধু হয়ে মা সুরভী মেয়েকে স্পর্শের ধরনের পাশাপাশি শেখাচ্ছেন কারাতে কিন্তু কেন?
তিনি বলেন, ‘ব্যাড টাচ করে ফেলেছে অনেকক্ষেত্রে। তখন তাকে ভয় দেখানো হয় তুমি যদি বাবা-মাকে বলে দেও তাহলে তোমাকে মারবে। সেই জায়গা আমি রাখিনি। আমার বাচ্চা আমাকে এসে যেন যেকোনো কথা বলতে পারে।’
সম্প্রতি মাগুড়ায় ঘটে যাওয়া শিশু ধর্ষণের ঘটনায় আবারো সামনে এসেছে কতটা অনিরাপদ আমাদের শৈশব। কেবল অপরিচিত নয় পরিবারের সদস্য বা কাছের পরিচিত মাধ্যমেই শিশুরা বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শুধু মেয়ে শিশুই নয়, ছেলে শিশুরাও ছাড় পাচ্ছে না যৌন হয়রানির হাত থেকে।
এতে করে আতঙ্ক বাড়ছে অভিভাবকদের মাঝে।
অভিভাবকদের একজন বলেন, ‘যেখানে একটা ছেলে বাচ্চা সেভ না সেখানে একটা মেয়ে বাচ্চার কি অবস্থা হতে পারে।’
আরেকজন বলেন, ‘এমন ভয়ংকর শাস্তি দেয়া উচিত যে ওই একজনকে দেখে সবাই ভয় পাবে।’
বাংলাদেশের আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী ২০২৪ সালে ২৩৪টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ৬৬টি। এর বাইরে ছেলে শিশু বলাৎকারের ঘটনা ছিল ৩৬টি, বলাৎকারের চেষ্টা তিনটি। লিপিবদ্ধ তালিকাই আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু তালিকার বাইরে থেকে যায় আরো অসংখ্য শিশু নিপীড়নের ঘটনা।
কেবল নির্যাতনেই থেমে থাকে না এসব ঘটনা। মনের গভীরে রেখে যায় বড় ক্ষত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিচিত হলে একদিকে বাচ্চাদের সংস্পর্শে আসা যেমন সহজ, জোর খাটানোও তেমন সহজ তাই এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে সামাজিক ট্যাবু না রেখে বাচ্চাকে মানসিক ট্রমা থেকে বের করতে দ্রুত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, ‘আমাদের দেশের নাগরিকরা মানসিক চিকিৎসাকে তেমন পাত্তা দেয় না। মানসিক চিকিৎসাকে অন্য চিকিৎসা থেকে আলাদা ভাবা হয়। মেইনলি হচ্ছে চিকিৎসা অথেনটিক জায়গা থেকে নেয়া’
দেশে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হলেও কার্যকরের সংখ্যা কম। সামাজিক সচেতনতার অভাব এবং সঠিকভাবে সবাই আইন না জানার কারণে এই ধরনের অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
আইনজীবী রাশেদা চৌধুরী নিলু বলেন, ‘যদি কোনো শিশুকে যৌন হয়রানির উদ্দেশে স্পর্শ করা হয়। যেটাতে ওই শিশু অস্বস্তি অনুভব করে। এইটা অবশ্যই যৌন হয়রানির সংঘাতে পড়বে। আইনের প্রয়োগ তখনই হবে যখন সাধারণ মানুষ আইন সম্পর্কে জানবে।’