বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সিটি করপোরেশনের সাথে। তারা বলেন, কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ নিয়ে তাদের যে প্রকল্পটি চালু ছিল সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে শীঘ্রই নতুন প্রকল্প চালু করা হবে।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নতুন প্রকল্প চালু করা জন্য প্রক্রিয়া চলছে।
কুকুরের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাড়ছে খাবারের সংকটও। পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে আক্রমণাত্মকও হচ্ছে তারা। সাথে রাস্তাঘাটে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে এইসব প্রাণিরা।
সাধারণ মানুষদের একজন বলেন, ‘বাচ্চারা বের হতে পারে না। সকালে মানুষ হাটতে পারে না। রাতের বেলা অসংখ্য আওয়াজ।’
আরেকজন বলেন, ‘কুকুর সবসময়ের জন্য কমিয়ে রাখায় ভালো।’
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এগিয়ে এসেছেন কিছু তরুণ। ব্যক্তিগত ভাবে অর্থ ও শ্রম দিয়ে কমিউনিটি কুকুরদের টিকা ও বন্ধ্যাত্বকরণে কাজ করছেন তারা। প্রাণীকল্যাণ আইনে কুকুর নিধন ও অপসারণ নিষিদ্ধ হওয়ায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কুকুরের বন্ধ্যাত্বকরণের কাজে এগিয়ে এসেছেন কয়েকজন তরুণ।
প্রাণিপ্রেমী ফাহিম হাসান রবি বলেন, ‘আমাদের বাসার আসে পাশে যারা প্রাণিপ্রেমী রয়েছে তারা কিছু দেই। আবার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। আমরা প্রতিমাসে ৮-১০ টা কুকুর প্রতিমাসে বন্ধ্যাত্বকরণ করাতে পারি। গত ৮ বছরে আমরা ১ হাজারের মতো কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ করিয়েছি আমরা।’
পথকুকুর বা মালিকহীন কুকুরদের দেখভাল করেন কিছু স্থানীয় সাধারণ মানুষ। প্রাণীগুলোকে যখন গাড়িতে তোলা হচ্ছিলো, তখন তাদের চোখে-মুখে ভয়-আশংকার ছাপ। তাদের প্রিয় কুকুরটি এলাকায় ফিরবে তো?
কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে নয়, ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করেন তারা। তাই রয়েছে আর্থিক সংকট। কুকুর ধরা থেকে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া এবং টিকা ও বন্ধ্যাত্বকরণ করা পর্যন্ত প্রতিটি কুকুরের পিছনে খরচ হয় প্রায় ২০০০-২৫০০ টাকার মত। এ অবস্থায় প্রতিমাসে ১০টি কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণে কাজ করতে পারেন তারা।
প্রাণিপ্রেমী ফাহিম হাসান রবি বলেন, ‘আমার কাছে তো টাকা নেই। একটা গলিতে করাতে গেলে পাশের গলিতে আবার বেড়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন যদি তাদের বন্ধ্যাত্বকরণে কাজ শুরু করে তাহলে প্রত্যেকটি কুকুরকে এর আওতায় আনা সম্ভব।’
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মাহমুদুর রহমান তাদেরই একজন। কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণের জন্য যিনি ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ছোট একটি হাসপাতাল।
ডা. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এইটা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সার্জারি। যেটা কসমেটিক পদ্ধতি সার্জারি। এইটার সুতা বা সেলাই কাটতে হয় না।’
সরকারি প্রকল্পের বাইরে ব্যক্তি উদ্যোগে যারা এভাবে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ নিয়ে কাজ করছে তাদের সহযোগিতা করতে চায় সিটি করপোরেশনও।
ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, তাদেরকে বলবো আমাদের অফিসে আসার জন্য। আমরা তাদের মাধ্যমে এইটা বাস্তবায়ন করতে পারলে নিজেদেরকে হর্বিত মনে করবো এই কারণে যে যুব সমাজকে সচেতন করতে পারলে আমাদের সমাজ দ্রুত গ্রহণ করতে পারবে।
ইটপাথরের এই শহরে প্রকৃতি আর প্রাণিপ্রেমীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। রাতের আধাঁরে কিংবা চোখের আড়ালে প্রাণিদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন তারা। তেমনই এক যুগল আদিতি ফয়সাল।
মিরপুরে বাস করা এই দম্পতি খাবারের জোগানসহ দেখাশোনা করেন বেশকিছু বেওয়ারিশ কুকুরদের। প্রাণিদের প্রতি স্ত্রীর এমন টান দেখে সব ধরনের সহযোগিতাই করেন স্বামী ফয়সাল।
ইব্রাহিম ফয়সাল বলেন, ‘আমি যে প্রাণিপ্রেমী সেটা বলবো না। আমার স্ত্রী প্রাণিপ্রেমী। ওর সাথে থাকতে থাকতে আমার ভালো লাগছে।’
আদিতি নাহার রেবা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় মানুষ থেকে ওদেরকে ভালোবাসা ভালো। ওদেরকে ভালোবাসলে কিছু ব্যাক না পেলেও অপকৃত হবে না।’
বন্ধ্যাত্বকরণ ও ভ্যাক্সিন কার্যক্রম শেষে অপারেশন পরর্বতী যত্নের জন্য ২ থেকে ৩ দিন তারা থাকে সেই ক্লিনিকে। এরপর পথকুকুরদের আবারও ফিরিয়ে দেয়া হয় নিজ নিজ এলাকায়।
দ্রুত হারে কুকুরের সংখ্যা বাড়লেও বেওয়ারিশ এই কুকুরদের দেখার কেউ নেই। তাই সমস্যা নিরসনে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণে যে উদ্যোগ নিচ্ছে এইসকল তরুণরা সেই উদ্যোগে দরকার সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা ও কার্যক্রম।